পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

CS్చ e " রবীন্দ্র-রচনাবলী $o যতক্ষণ পারি ওই কথাটাই ভুলে থাকতে চাই। নিচের দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে আসি গে ।” খানিক পরে উপরে এসে বললে, "চলো ছাদে। নিচের তলাকার আলোর খুব গুলো সব খুলে নিয়েছি। ভয় পেয়ে না।” η- . . দুজনে ছাদে এসে ছাদে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে দিলে । বন্ধ দরজায় ঠেসান দিয়ে বসল অতীন, এলা বসল তার সামনে । “এল, মন সহজ করে। ষেন কিছু হয় নি, যেন আমরা দুজনে আছি লঙ্কাকাও আরম্ভ হবার আগে সুন্দরকাণ্ডে । তোমার হাত অমন বরফের মতো ঠাগু কেন ? কঁপিছে যে । দাও গরম করে দিই।” এলার হাত দুখানি নিয়ে অতীন জামার নিচে বুকের উপর চেপে রাখলে। তখন দূরের পাড়ায় বিয়েবাড়িতে সানাই বাজছে । * “ভয় করছে, এলী ?” “কিসের ভয় ?” “সমস্ত কিছুর । প্রত্যেক মুহূর্তের ।” “ভয় তোমার জন্তে, অস্তু, আর কিছুর জন্তে নয় ।” অতীন বললে, “এলী, মনে করতে চেষ্টা করে আমরা আছি পঞ্চাশকি এক-শ বছর পরেকার এমনি এক নিস্তব্ধ রাতে। উপস্থিতের গণ্ডিটা নিতান্ত সংকীর্ণ, তার মধ্যে ভয়ভাবনা দুঃখকষ্ট সমস্তই প্রকাগুতার ভান করে দেখা দেয় । বর্তমান সেই নীচ পদার্থ যার ছোটো মুখে বড়ো কথা । ভয় দেখায় সে মুখোশ পরে—যেন আমরা মুহূর্তের কোলে নাচানো শিশু । মৃত্যু মুখোশখান টান মেরে ফেলে দেয়। মৃত্যু অত্যুক্তি করে না । যা অত্যন্ত করে চেয়েছি তার গায়ে মোট অঙ্কের দাম লেখা ছিল বর্তমানের ফকির কলমে, যা অত্যন্ত করে হারিয়েছি তার গায়ে দুদিনের কালি লেবেল মেরে লিখেছে অপরিসীম দুঃখ । মিথ্যে কথা ! জীবনটা জালিয়াত, সে অনন্তকালের হস্তাক্ষর জাল করে চালাতে চায়। মৃত্যু এসে হাসে, বঞ্চনার দলিলট লোপ করে দেয়। সে হালি নিষ্ঠুর হাসি নয়, বিদ্রুপের হাসি নয়, শিবের হাসির মতে সে শাস্ত সুন্দর হাসি, মোহরাত্রির অবসানে। এলী, রাত্রে একলা বসে কখনো মৃত্যুর স্নিগ্ধ সুগভীর মুক্তি অনুভব করেছ, যার মধ্যে চিরকালের ক্ষমা ?” “তোমার মতে বড়ো করে দেখবার শক্তি আমার নেই অপ্ত—তবু তোমাদের কথা মনে করে উদ্বেগে যখন অভিভূত হয়ে পড়ে মন,—তখন এই কথাটা খুব নিশ্চিত করে অঙ্গভব করতে চেষ্টা করি যে মরা সহজ ।”