পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম එ8ළු দিনে সংসারক্ষেত্রে আমাদের শক্তিপ্রয়োগের মুখ, রাত্রে তাহ অভিভূত হয় বলিয়াই নিখিলের মধ্যে আমরা আত্মসমর্পণের আনন্দ পাই । দিনে স্বার্থসাধনচেষ্টায় আমাদের কর্তৃত্ব-অভিমান তৃপ্ত হয়, রাত্রি তাহাকে খর্ব করে বলিয়াই প্রেম এবং শাস্তির অধিকার লাভ করি । দিনে আলোকে-পরিচ্ছিন্ন এই পৃথিবীকে আমরা উজ্জলরপে পাই, রাত্রে তাহা স্নান হয় বলিয়াই অগণ্য জ্যোতিক্ষলোক উদঘাটিত হইয়া যায়। আমরা একই সময়ে সীমাকে এবং অসীমকে, অহংকে এবং অখিলকে, বিচিত্রকে এবং এককে সম্পূর্ণভাবে পাইতে পারি না বলিয়াই একবার দিন আসিয়া আমাদের চক্ষু খুলিয়া দেয়, একবার রাত্রি আসিয়া আমাদের হৃদয়ের দ্বার উদঘাটিত করে। একবার আলোক আসিয়া আমাদিগকে কেন্দ্রের মধ্যে নিবিষ্ট করে, একবার অন্ধকার আসিয়া আমাদিগকে পরিধির সহিত পরিচিত করিতে থাকে । j. এইজন্য রাত্রিই উৎসবের বিশেষ সময় । এখন বিশ্বভুবন অন্ধকারের মাতৃকক্ষে আসিয়া সমবেত হইয়াছে। যে অন্ধকার হইতে জগংচরাচর ভূমিষ্ঠ হইয়াছে, যে অন্ধকার হইতে আলোক-নিঝরিণী নিরস্তর উৎসারিত হইতেছে, যেখানে বিশ্বের সমস্ত উদযোগ নিঃশকে শক্তিসঞ্চয় করিতেছে, সমস্ত ক্লাস্তি সুপ্তিসুধার মধ্যে নিমগ্ন হইয়া নবজীবনের জন্য প্রস্তুত হইতেছে, যে নিস্তন্ধ মহান্ধকারগর্ভ হইতে এক-একটি উজ্জল দিবস নীলসমুদ্র হইতে এক-একটি ফেনিল তরঙ্গের ন্যায় একবার আকাশে উত্থিত হইয়া আবার সেই সমুদ্রের মধ্যে শয়ান হইতেছে, সেই অন্ধকার আমাদের নিকট যাহা গোপন করিতেছে, তাহ অপেক্ষা অনেক অধিক প্রকাশ করিতেছে । সে না থাকিলে লোকলোকাস্তরের বার্তা আমরা পাইতাম না, আলোক আমাদিগকে কারারুদ্ধ করিয়া রাধিত । এই রজনীর অন্ধকার প্রত্যহ একবার করিয়া দিবালোকের স্বর্ণসিংহদ্বার মুক্ত করিয়া আমাদিগকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্তঃপুরের মধ্যে আনিয়া উপস্থিত করে, বিশ্বজননীর এক অখণ্ড নীলাঞ্চল আমাদের সকলের উপরে টানিয়া দেয় । সস্তান যখন মাতার আলিঙ্গনপাশের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রচ্ছন্ন হইয়া কিছুই দেখে না-শোনে না, তখনই নিবিড়তরভাবে মাতাকে অনুভব করে—সেই অনুভূতি দেখা-শোনার চেয়ে অনেক বেশি ঐকাস্তিক— স্তন্ধ অন্ধকার তেমনি যখন আমাদের দেখা-শোনাকে শাস্ত করিয়া দেয়, তখনই আমরা এক শয্যাতলে নিখিলকে ও নিখিলমাতাকে আমাদের বক্ষের কাছে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে নিকটবর্তী করিয়া অনুভব করি। তখন নিজের অভাব নিজের শক্তি নিজের কাজ বাড়িয়া উঠিয়া আমাদের চারিদিকে প্রাচীর তুলিয়া দেয় না, অত্যুগ্র ভেদবোধ আমাদের প্রত্যেককে খণ্ড-খণ্ড পৃথক-পৃথক করিয়া রাখে না, মহং নিঃশৰতার মধ্য দিয়া নিধিলের