পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বর্ষশেষ পুরাতন বর্ষের সূর্য পশ্চিম প্রাস্তরের প্রান্তে নিঃশবে অস্তমিত হইল। যে কয়বৎসর পৃথিবীতে কাটাইলাম অন্ত তাহারই বিদায়যাত্রার নিঃশষ পক্ষধ্বনি এই নির্বাণালোক নিস্তন্ধ আকাশের মধ্যে যেন অনুভব করিতেছি । সে অজ্ঞাত সমুদ্রপারগামী পক্ষীর মতো কোথায় চলিয়া গেল তাহার আর কোনো চিহ্ন নাই । হে চিরদিনের চিরস্তন, অতীত জীবনকে এই যে আজ বিদায় দিতেছি এই বিদায়কে তুমি সার্থক করে – আশ্বাস দাও যে, যাহা নষ্ট হইল বলিয়া শোক করিতেছি তাহার সকলই যথাকালে তোমার মধ্যে সফল হইতেছে । আজি যে প্রশান্ত বিষাদ সমস্ত সন্ধ্যাকাশকে আচ্ছন্ন করিয়া আমাদের হৃদয়কে আবৃত করিতেছে, তাহা সুন্দর হউক, মধুময় হউক, তাহার মধ্যে অবসাদের ছায়ামাত্র না পড়ুক। আজ বর্ষাবসানের অবসানদিনে বিগত জীবনের উদ্দেশে আমাদের ঋষি পিতামহুদিগের আনন্দময় মৃত্যুমন্ত্র উচ্চারণ করি ওঁ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরস্তি সিন্ধবঃ। মাধীন সন্তোষধী: । মধু নক্তম উতোষসে মধুমৎ পাখিবং রজঃ - মধুমান্নো বনস্পতিমধুমাং অভ স্বর্য । ওঁ । বায়ু মধু বহন করিতেছে। নদী সিন্ধু সকল মধুক্ষরণ করিতেছে। ওষধী বনস্পতি সকল মধুময় হউক। রাত্রি মধু হউক উব মধু হউক, পৃথিবীর ধূলি মধুমৎ হউক। স্বৰ্ধ মধুমান श्छक । রাত্রি যেমন আগামী দিবসকে নবীন করে, নিদ্রা যেমন আগামী জাগরণকে উজ্জল করে, তেমনি অদ্যকার বর্ষাবসান যে গত জীবনের স্মৃতির বেদনাকে সন্ধ্যার ঝিল্লিঝংকারসুপ্ত অন্ধকারের মতো হৃদয়ের মধ্যে ব্যাপ্ত করিয়া দিতেছে, তাহা যেন নববর্ষের প্রভাতের জন্য আমাদের আগামী বৎসরের আশামুকুলকে লালন করিয়া বিকশিত করিয়া তুলে। যাহা যায় তাহ যেন শূন্তত রাখিয়া যায় না, তাহ যেন পূর্ণতার জন্য স্থান করিয়া যায়। যে বেদন হৃদয়কে অধিকার করে তাহা যেন নব আনন্দকে জন্ম দিবার বেদন হয় । বে বিষাধ্যানের পূর্বাভাস, যে শান্তি মঙ্গল কর্মনিষ্ঠার জননী, যে বৈরাগ্য উদার প্রেমের অবলম্বন, যে নির্মল শোক তোমার নিকটে আত্মসমর্পণের মন্ত্রগুরু তাহাই