পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী না । তিনি আনন্দিত, সমস্ত প্রকাশ এই কথাই বলিতেছে। যাহা-কিছু আছে, এ-সমস্তই তাহার আনন্দরূপ, তাহার অমৃতরূপ সুতরাং ইহার কিছুই অপ্রকাশ হইতে পারে না । তাহার আনন্দকে কে আচ্ছন্ন করিবে ? এমন মহান্ধকার কোথায় আছে ? ইহার কণাটকেও ধ্বংস করিতে পারে, এমন শক্তি কার। এমন মৃত্যু কোথায় ? এ ষে অমৃত । ! সত্যং জ্ঞানমনস্তম্। তিনি বাক্যের মনের অতীত। কিন্তু অতীত হইয়া রছিলেন কই ? এই যে দশদিকে তিনি আনন্দরূপে আপনাকে একেবারে দান করিয়া ফেলিতেছেন। তিনি তো লুকাইলেন না। যেখানে আনন্দে অমৃতে তিনি অজস্র ধরা দিয়াছেন, সেখানে প্রাচুর্ষের অন্ত কোথায়, সেখানে বৈচিত্র্যের ষে সীমা নাই ; সেখানে কী ঐশ্বৰ্ষ, কী সৌন্দৰ। সেখানে আকাশ ষে শতধা বিদীর্ণ হইয়া আলোকে আলোকে নক্ষত্রে নক্ষত্রে খচিত হইয়া উঠিল, সেখানে রূপ ষে কেবলই নূতন নূতন, সেখানে প্রাণের প্রবাহ যে আর ফুরায় না। তিনি যে আনন্দরূপে নিজেকে নিয়তই দান করিতে বসিয়াছেন— লোকে-লোকান্তরে সে-দান আর ধারণ করিতে পারিতেছে না—যুগে-যুগান্তরে তাহার আর অস্ত দেখিতে পাই না। কে বলে, তাহাকে দেখা যায় না ; কে বলে, তিনি শ্রবণের অতীত ; কে বলে, তিনি ধরা দেন না । তিনিই যে প্রকাশমান-আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি । সহস্ৰ চক্ষু থাকিলেও ষে দেখিয়া শেষ করিতে পারিতাম না, সহস্ৰ কর্ণ থাকিলেও শোনা ফুরাইত কবে। যদি ধরিতেই চাও, তবে বাহু কতদূর বিস্তার করিলে সে-ধরার অন্ত হইবে । এ যে আশ্চর্ষ। মানুষজন্ম লইয়া এই নীল আকাশের মধ্যে কী চোখই মেলিয়াছি। এ কী দেখাই দেখিলাম। দুটি কর্ণপুট দিয়া অনন্ত রহস্যলীলাময় স্বরের ধারা অহরহ পান করিয়া যে ফুরাইল না। সমস্ত শরীরটা যে আলোকের স্পর্শে বায়ুর স্পর্শে স্নেহের স্পর্শে প্রেমের স্পর্শে কল্যাণের স্পর্শে বিদ্যুৎতীখচিত অলৌকিক বীণার মতো বারংবার স্পতি-ঝংকৃত হইয়া উঠিতেছে। ধন্ত হইলাম, আমরা ধন্ত হইলাম—এই প্রকাশের মধ্যে প্রকাশিত হইয়া ধন্য হইলাম— পরিপূর্ণ আনন্দের এই আশ্চর্য অপরিমেয় প্রাচুর্যের মধ্যে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐশ্বর্ষের মধ্যে আমরা ধন্য হইলাম। পৃথিবীর ধূলির সঙ্গে তৃণের সঙ্গে কীটপতঙ্গের সঙ্গে গ্রত্নতারাস্বৰ্ধচন্দ্রের সঙ্গে আমরা ধন্ত হইলাম। ধূলিকে আজ ধূলি বলিয়া অবজ্ঞা করিয়ে না, তৃণকে আজ তৃণজ্ঞান করিয়ে না,— তোমার ইচ্ছায় এ ধূলিকে পৃথিবী হইতে মুছিতে পার না, এ ধূলি উহার ইচ্ছা ; তোমার ইচ্ছায় এ তৃণকে অবমানিত করিতে পার না, এ গমল তৃণ তাঁহারই আনন্দ মূর্তিমান। তাহার আনন্দপ্রবাহ আলোকে উচ্ছসিত হইয়া আজ বহুলক্ষক্রোশ দূর হইতে নৰ