পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b’e রবীন্দ্র-রচনাবলী । হতে পারে, নইলে কোনো একটা দিকেই সে জলে উঠে হয়তো কর্মকে নষ্ট করে, জ্ঞানকে বিকৃত করে, সংসারকে আঘাত করে, নিজেকে একদমে খরচ করে কেলে । ষ্ট্রী দ্বারাই সতী স্ত্রী আপনার প্রেমকে ধারণ করে, তাকে নানাদিকে বিকীর্ণ করে দেয়— এইরূপে সে-প্রেম কাউকে দগ্ধ করে না, সকলকে আলোকিত করে। আমাদের পৃথিবীর এই রকমের একটি আবরণ আছে—সেটি হচ্ছে বাতাসের আবরণ । এই আবরণটির দ্বারাই ধরণী স্বর্ষের আলোককে পরিমিত এবং ব্যাপকভাবে সর্বত্র বিকীর্ণ করে দেয়। এই আবরণটি না থাকলে রৌত্র ষেধানটিতে পড়ত সেখানটিকে দগ্ধ এবং রুস্ত্ররূপে উজ্জল করত এবং ঠিক তার পাশেই যেখানে ছায়া সেখানে হিমশীতল মৃত্যু ও নিবিড়তম অন্ধকার বিরাজ করত। অসতীর যে প্রেমে ষ্ট্রী নেই, সংযম নেই, সে প্রেম নিজেকে পরিমিতভাবে সর্বত্র বিকীর্ণ করতে পারে না, সে প্রেম এক জায়গায় উগ্ৰজাল এবং ঠিক তার পাশেই তেজোহীন আলোকবঞ্চিত ঔদাসীষ্ঠ বিস্তার করে । , আমাদেরও এই মানস-পুরীর সতীর প্রেমে ধী থাকবে, জ্ঞানের বিশুদ্ধতা থাকবে । এ প্রেম সংস্কারজালে জড়িত মূঢ় প্রেম নয়। পশুদের মতো একটা সংস্কারগত অন্ধ প্রেম নয়। এর দৃষ্টি জাগ্রত, এর চিত্ত উন্মুক্ত। কোনো কল্পনার দ্রব্য দিয়ে এ নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে চায় না–এ যাকে চায় তার অবাধ পরিচয় চায়, তার সম্বন্ধে সে যে নিজের জ্ঞানকে অপমানিত করে রাখবে এ সে সহ করতে পারে না । এর মনে মনে কেবলই এই ভয় হয় যে পাছে পাবার একান্ত আগ্রহে একটা কোনো ভুলকে পেয়েই সে নিজেকে শাস্ত করে রাখে। পাধি যেমন ডিমে তা দেবার জন্তেই ব্যাকুল, তাই সে । একটা মুড়ি পেলেও তাতে তা দিতে বসে, তেমনি পাছে আমাদের প্রেম কোনোমতে কেবল আত্মসমর্পণ করতেই ব্যগ্র হয়, কাকে যে আত্মসমপণ করছে সেটার দিকে পাছে তার কোনো খেয়াল না থাকে এই আশঙ্কাটুকু যায় না—পতিকে দেখে নেবার জন্তে সন্ধ্যার অন্ধকারে নিজের প্রদীপটিকে যেন সে সাবধানে জালিয়ে রাখতে চায়। তার পরে আমাদের এই সতীর প্রেমে ঐ থাকবে, সৌন্দর্ষের আনন্দময়ত থাকবে। কিন্তু যদি স্ত্রীর অভাব ঘটে, যদি ধীর বিকার ঘটে, তবে এই ঐও নষ্ট হয়ে যায় । সতী আত্মা যে প্রার্থনা উচ্চারণ করেছিলেন তার মধ্যে প্রেমের কোনে,অঙ্গের অভাব ছিল না । তিনি ষে অমৃত চেয়েছিলেন, তা পরিপূর্ণ প্রেম—ত কর্মহীন জ্ঞানহীন প্ৰমত্ত প্রেম নয়। তিনি বলেছিলেন, আসতে মা সাগময়—অসত্য হতে আমাকে সত্যে নিয়ে যাও। তিনি বলেছিলেন, আমি র্যাকে চাই তিনি যে সত্য, নিজেকে সকল দিকে সত্যের নিয়মে সত্যের বন্ধনে না বাধলে তার সঙ্গে যে আমার পরিণয়বন্ধন সমাপ্ত হবে না। বাক্যে চিন্তায় কর্মে সত্য হতে হবে, তাহলেই বিনি