পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●、● রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রত্যেককে একটি করে ইচ্ছার তালুক দান করেছেন—দানপত্রে আছে “ষাবক্ষজ দিবাকরে।” আমরা একে ভোগ করতে পারব। আমাদের এই চিরন্তন ইচ্ছার অধিকার নিয়ে আমরা এক-একবার অহংকারে উন্মত্ত হয়ে উঠি । বলি, যে, আমার নিজের ইচ্ছা ছাড়া আর কাউকেই মানি নে—এই বলে সকলকে লঙ্ঘন করার দ্বারাই আমার ইচ্ছা যে স্বাধীন এইটে আমরা স্পর্ধার সঙ্গে অনুভব করতে চাই। কিন্তু ইচ্ছার মধ্যে আর একটি তত্ত্ব আছে—স্বাধীনতায় তার চরম মুখ নয় । শরীর যেমন শরীরকে চায়, মন যেমন মনকে চায়, বস্তু ষেমন বস্তুকে আকর্ষণ করে— ইচ্ছা তেমনি ইচ্ছাকে না চেয়ে থাকতে পারে না । অন্ত ইচ্ছার সঙ্গে মিলিত না হতে পারলে এই একলা ইচ্ছা আপনার সার্থকতা অনুভব করে না । যেখানে কেবলমাত্র প্রয়োজনের কথা সেখানে জোর খাটানে চলে—জোর করে থাবার কেড়ে খেয়ে ক্ষুধা মেটে। কিন্তু ইচ্ছা যেখানে প্রয়োজনহীন, যেখানে অহেতুকভাবে সে নিজের বিশুদ্ধ স্বরূপে থাকে, সেখানে সে যা চায় তাতে একেবারেই জোর খাটে না, কারণ, সেখানে সে ইচ্ছাকেই চায়। সেখানে কোনো বস্তু, কোনো উপকরণ, কোনো স্বাধীনতার গর্ব, কোনো ক্ষমতা তার ক্ষুধা মেটাতে পারে না—সেখানে সে আর একটি ইচ্ছাকে চায়। সেখানে সে যদি কোনো উপহার সামগ্রীকে গ্রহণ করে তবে সেটাকে সামগ্ৰী বলে গ্রহণ করে না—যে ব্যক্তি দান করেছে তারই ইচ্ছার নিদর্শন বলে গ্রহণ করে—তার ইচ্ছারই দামে এর দাম । মাতার সেবা যে ছেলের কাছে এত মূল্যবান সে তো কেবল সেবা বলেই মূল্যবান নয়, মাতার ইচ্ছা বলেই তার এত গৌরব - দাসের দাসত্ব নিয়ে আমার ইচ্ছার আকাঙ্ক মেটে না—বন্ধুর ইচ্ছাকৃত আত্মসমর্পণের জন্তেই সে পথ চেয়ে থাকে । এমনি করে ইচ্ছা যেখানে অন্ত ইচ্ছাকে চায় সেখানে সে আর স্বাধীন থাকে না । সেখানে নিজেকে তার খর্ব করতেই হয় । এমন কি, তাকে আমরা বলি ইচ্ছা বিসর্জন দেওয়া । ইচ্ছার এই যে অধীনতা এমন অধীনতা আর নেই। দাসতম দাসকেও আমরা কাজে প্রবৃত্ত করতে পারি কিন্তু তার ইচ্ছাকে সমর্পণ করতে বাধ্য ক পারি নে । * আমার যে সংসারে আমার ইচ্ছাই হচ্ছে মূল কর্তা সেখানে আমার একটা সর্বপ্রধান কাজ হচ্ছে অন্তের ইচ্ছার সঙ্গে নিজের ইচ্ছা সম্মিলিত কয়। যত তা করতে পারব ততই আমার ইচ্ছার রাজ্য বিষ্কৃত হতে থাকবে—আমার সংসার ততই বৃহৎ হয়ে উঠবে। সেই গৃহিণীই হচ্ছে যথার্থ গৃহিণী ষে পিতামাত ভাইৰোন স্বামী পুত্ৰ দাসদাসী