পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ S八う রবীন্দ্র-রচনাবলী ফস করে মারা গেল বলে চিকিৎসাশাস্ত্রটাকে ধিক্কার দেওয়া বৃথা বাক্যব্যয় । অতএব কেউ যদি বলে আমার বয়স যতই বাড়ছে আমার আয়ু ততই কমে যাচ্ছে, তাহলে তাকে আমি নিন্দুক বলি নে, বড়েজোর এই বলি যে, লোকটা বাজে কথা এমনভাবে বলে যেন সেটা দৈববাণী । কালক্রমে আমার ক্ষমতা হ্রাস হয়ে ষাচ্ছে, এই বিধিলিপি নিয়ে যুবক হোক বৃদ্ধ হোক, কবি হোক অকবি হোক, কারে সঙ্গে তকরার করার চেয়ে ততক্ষণ একটা গান লেখা ভালো মনে করি, তা সেটা পছন্দসই হোক আর না হোক । এমন কি সেই অবসরে শিশু ভোলানাথের জাতের কবিতা যদি লিখতে পারি, তাহলেও মনটা খুশি থাকে • • • ওই শিশু ভোলানাথের কবিতাগুলো খামক কেন লিপতে বসেছিলুম ? সেও লোকরঞ্জনের জন্যে নয়,—নিতান্ত নিজের গরজে । পূর্বেই বলেছি, কিছুকাল আমেরিকার প্রৌঢ়তার মরুপারে ঘোরতর কার্যপটুতার পাথরের দুর্গে আটকা পড়েছিলুম। সেদিন খুব স্পষ্ট বুঝেছিলুম জমিয়ে তোলবার মতে, এতবড়ো মিথ্যে ব্যাপার জগতে আর কিছুই নেই। এই জমাবার জমাদারটা বিশ্বের চিরচঞ্চলতাকে বাধা দেবার স্পর্ধ করে ; কিন্তু কিছুই থাকবে না, আজ বাদে কাল সব সাফ হয়ে যাবে। যে-শ্রোতের ঘূর্ণিপাকে এক-এক জায়গায় এই সব বস্তুর পিণ্ডগুলোকে স্তৃপাকার করে দিয়ে গেছে, সেই স্রোতেরই অবিরত বেগে ঠেলে ঠেলে সমস্ত ভাসিয়ে নীল সমুদ্রে নিয়ে যাবে—পৃথিবীর বক্ষ সুস্থ হবে । পৃথিবীতে স্বষ্টির যে লীলাশক্তি আছে সে যে নিলোভ, সে নিরাসক্ত, সে অকৃপণ,—সে কিছু জমতে দেয় না ; কেননা জমার জঞ্জালে তার স্বষ্টির পথ আটকায়,—সে ধে নিত্যনূতনের নিরস্তর প্রকাশের জন্তে তার অবকাশকে নির্মল করে রেখে দিতে চায় । লোভী মানুষ কোথা থেকে জঞ্জাল জড়ো করে সেইগুলোকে আগলে রাখবার জন্যে নিগড়বদ্ধ লক্ষ লক্ষ দাসকে দিয়ে প্রকাণ্ড সব ভাণ্ডার তৈরি করে তুলছে। সেই ংসশাপগ্ৰস্ত ভাণ্ডারের কারাগারে জড়বস্তপুঞ্জের অন্ধকারে বাসা বেঁধে সঞ্চয়ুগর্বের ঔদ্ধত্যে মহাকালকে কৃপণটা বিক্রপ করছে,—এ বিদ্রুপ মহাকাল কখনোই সইবে না। আকাশের উপর দিয়ে যেমন ধুলানিবিড় আঁধি ক্ষণকালের জন্তে স্বৰ্ষকে পরাভূত করে দিয়ে তার পরে নিজের দৌরাত্ম্যের কোনো চিহ্ন না রেখে - চলে যায়, এ-সব তেমনি করেই শূন্যের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিছুকালের জন্তে আমি এই বস্ত উদগারের অন্ধযন্ত্রের মুখে এই বক্তসঞ্চয়ের