পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবণগাথা У\O(). ওয়ে বড় নেমে আয়, আয়রে আমার শুকনো পাতার ডালে এই বরযায়। নবশ্যামের আগমনের কালে । যা উদাসীন, যা প্ৰাণহীন, যা আনন্দাহারা চরম রাতের অশ্রুধারায় আজ হয়ে যাক সারা যাবার যাহা যাক সে চলে রুদ্রনাচের তালে। আসন আমার পাততে হবে রিক্ত প্ৰাণের ঘরে, নবীন বসন পরতে হবে সিক্ত বুকের পরে। নদীর জলে বান ডেকেছে,কুল গেল তার ভেসে, যুখীবনের গন্ধবাণী দুটলানিরুদ্দেশে পরান আমার জাগল বুঝি মরণ-অন্তরালে ৷ রাজা। আমার সভাকবিকে বিমর্ষ করে দিয়েছ। তোমাদের এই গানে গানকে ছাড়িয়ে গানের কবিকে দেখা যাচ্ছে বেশি, ঐখানে ইনি দেখছেন ওঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে । মনে মনে তর্ক করছেন, কী করে। আধুনিক ভাষায় এর খুব একটা কর্কশ জবাব দেওয়া যায়। আমি বলি- কাজ নেই, একটা সাদা ভাবের গান সাদা সুরে ধরো, যদি সম্ভব হয় ওঁর মনটা সুস্থ হােক । নটরাজ । মহারাজের আদেশ পালন করব । আমাদের ভাষায় যতটা সম্ভব সহজ করেই প্ৰকাশ । করব, কিন্তু যত্নেকৃতে যদি না সিধতি কোহিত্রদোবঃ। সকরুণা, এই বারিপতনশদের সঙ্গে মিলিয়ে বিচ্ছেদের আশঙ্কাকে সুরের যোগে মধুর করে তোলো । ভেবেছিলেম আসবে ফিরে, তাই ফাগুন-শেবে দিলেম বিদায় । যখন গেলে তখন ভাসি নয়ননীরে, এখন শ্রাবণদিনে মারি দ্বিধায় । বাদল-সাঝের অন্ধকারে আপনি কঁদাই আপনারে, এক ঝরে ঝরো বারিধারে ভাবি কী ডাকে ফিয়াব তোমায় । যখন থাক আঁখির কাছে তখন দেখি ভিতর বাহির সব ভরে আছে । সেই ভয়া দিনের ভরসাতে চাই বিরহের ভয় ঘোচাতে, তবু তোমা-হারা বিজন রাতে কেবল “হারাই হারাই বাজে হিয়ায় ৷ সভাকবি । নটরাজ, আমার ধারণা ছিল বসন্ত ঋতুরই ধাতটা বায়ুপ্রধান- সেই বায়ুর প্রকোপেই বিরহমিলনের প্রলাপটা প্রবল হয়ে ওঠে। কফপ্রধান ধাত বর্ধাির- কিন্তু তোমার পালায় তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছি। রক্ত হয়েছে তার চঞ্চল। তা হলে বর্ষায় বসন্তে প্ৰভেদটা কী। নটরাজ। সোজা কথায় বুঝিয়ে দেব- বসন্তের পাখি গান করে, বর্ষার পাখি উড়ে চলে। সভাকবি। তোমাদের দেশে এইটােকেই সোজা কথা বলে। আমাদের প্রতি কিছু দয়া থাকে। যদি, কথাটা আরো সোজা করতে হবে। নটরাজ। বসন্তে কোকিল ডালপালার মধ্যে প্রচ্ছন্ন থেকে বনচ্ছায়াকে সকরুণ করে তোলে-আর বর্ষায় বলাকাই বল, হংসশ্রেণীই বল, উধাও হয়ে মুক্ত পথে চলে শূন্যে-কৈলাসশিখর থেকে বেরিয়ে