পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(G3 রবীন্দ্র-রচনাবলী শনিগ্রহের পরের মণ্ডলীতে আছে য়ুরেনাস-নামক এক নতুন-খবর-পাওয়া গ্ৰহ । এ গ্রহ সম্বন্ধে বিশেষ বিবরণ কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এর আয়তন পৃথিবীর ৬৪ গুণ বেশি। সুৰ্য থেকে ১৭৮ কোটি ২৮ লক্ষ মাইল দূরে থেকে সেকেণ্ডে চার মাইল বেগে ৮৪ বছরে একবার তাকে । প্ৰদক্ষিণ করে। এত বড়ো এর আয়তন কিন্তু খুব দূরে আছে বলে দূরবীন ছাড়া একে দেখা যায় না। যে জিনিসে এ গ্রহ তৈরি তা জলের চেয়ে একটু ঘন, তাই পৃথিবী থেকে বহু গুণ বড়ো হলেও, এর ওজন পৃথিবীর ১৫ গুণ মাত্র । ১০ ঘণ্টা ৪৩ মিনিটে এ গ্রহ একবার ঘুরপাক খাচ্ছে। চারটি উপগ্রহ নিজ নিজ পথে ক্রমাগত একে প্ৰদক্ষিণ করছে। যুরেনাস আবিষ্কারের কিছুকাল পরেই পণ্ডিতেরা য়ুরেনসের বেহিসাবি চলন দেখে স্থির করলেন, এ গ্ৰহ পথের নিয়ম ভেঙেছে আর একটা কোনো গ্রহের টানে। খুঁজতে খুঁজতে বেরল সেই গ্রহ। তার নামকরণ হল নেপচুন | সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২৭৯ কোটি ৩৫ লক্ষ মাইল ; প্রায় ১৬৪ বছরে এ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর ব্যাস প্রায় ৩৩০০০ মাইল, য়ুরেনসের চেয়ে কিছু বড়ো। দূরবীনে শুধু ছোটাে একটি সবুজ থালার মতো দেখায়। একটি উপগ্রহ ২ লক্ষ ২২ হাজার মাইল দূরে থেকে ৫ দিন ২১ ঘণ্টায় একে একবার ঘুরে আসছে। উপগ্রহের দূরত্ব এবং এই গ্রহের আয়তন থেকে হিসাব করা হয়েছে যে এর বস্তুপদার্থ জল থেকে কিছু ভারী, ওজনে এ প্রায় য়ুরেনস-এর সমান। কত বেগে এ গ্রহ মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘুরছে তা আজও একেবারে ঠিক হয় নি। নেপচুনের আকর্ষণে য়ুরেনাস-এর যে নূতন পথে চলার কথা তা হিসেব করার পরেও দেখা গেল যে, য়ুরেনস ঠিক সে পথ ধরেও চলছে না। তার থেকে বোঝা গেল যে, নেপচুন ছাড়া এ গ্রহের গতিপথের বাইরে রয়েছে আরো একটা জ্যোতিষ্ক। ১৯৩০ সালে বেরিয়ে পড়ল নূতন এক গ্রহ। তার নাম দেওয়া হল প্লুটাে। এ গ্রহ এত ছোটাে ও এত দূরে যে দূরবীনেও একে দেখা যায়। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে নিঃসন্দেহে এর অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে। এই গ্রহই সূর্য থেকে সব চেয়ে দূরে, তাই আলো-উত্তাপ পাচ্ছে এত কম যে, এর অবস্থা আমরা কল্পনাও করতে পারি। নে । ৩৯৬ কোটি মাইল দূর থেকে প্রায় ২৫০ বছরে এ গ্রহ সূৰ্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে । ধুটো গ্রহটির তাপমাত্রা হবে বরফগলা শৈত্যের ৪৪৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পরিমাপের নীচে । এত শীতে অত্যন্ত দুরন্ত গ্যাসও তরল এমন-কি নিরেট হয়ে যায়। আঙ্গারিক গ্যাস, অ্যামেনিয়া,নাইট্রোজেন প্রভৃতি বায়ব পদার্থগুলো জমে বরফপিণ্ডে গ্রহটিকে নিশ্চয় ঢেকে ফেলেছে। কেউ কেউ মনে করেন। সৌরলোকের শেষ সীমানায় কতকগুলো ছোটাে ছােটাে গ্রহ ছিটিয়ে আছে, প্লুটাে তাদের মধ্যে একটি । কিন্তু এ মতের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি, কখনো যাবে কি না বলা যায় না। এখনকার চেয়ে অনেক প্রবলতর দুরবীন ঐ দূরত্বের যবনিকা তুলতে যদি পারে তা হলেই সংশয়ের সমাধান হবে। ভূলোক অন্য গ্রহের আকারের ও চলাফেরারী কিছু কিছু খবর জমেছে, কেবল পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার শরীরের গঠনরীতি আমরা পুরোপুরি অনেকটা জানতে পেরেছি। গ্যাসীয় অবস্থা পেরিয়ে যখন থেকে তার দেহ আঁটি বেঁধেছে তখন থেকেই সর্বাঙ্গে তার ইতিহাসের নানা সংকেতচিহ্ন আঁকা পড়ছে। পৃথিবীর উপরকার ভরে কোনো ঢাকা না থাকাতে সেই ভাগটা শীঘ্ৰ ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত হল, আর ভিতরের স্তর ক্রমশ নিরেট হতে থাকল। দুধের সর ঠাণ্ডা হতে হতে যেমন কুঁচকিয়ে যায়, পৃথিবীর