পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় (ሰ ፩ዒ "হাওড়ানো, অসমাপিকায় হাংড়িয়ে । এখানে ‘হাত’এর ত থেকে হেঁটে দেওয়া হল অকার। অথচ ‘হাতুড়ে শব্দের বেলায় নাহক একটা উকার এনে জুড়ে দিলে, তবু অকারকে কিছুতে আমল দিল না। "বাদল শব্দের উত্তর ইআ প্রত্যয় যোগ করে বদলে করলে না বটে, কিন্তু দিলে বাদুলে করে। এই সব দৃষ্টান্ত থেকে বুঝতে পারি, অন্তত পশ্চিম ও দক্ষিণ বঙ্গের রসনার টান আছে। উকারের দিকে। হাতড়িা শব্দ তাই সহজেই হয়েছে 'হাতুড়ি । তা ছাড়া দেখো : বাছুর তেঁতুল বামুন মিশুক হিংসুক বিযুৎবার ।” এই প্রসঙ্গে আর-একটা দৃষ্টান্ত দেবার আছে। ‘চিবোতে ঘুমোতে' শব্দের স্থলে আজকাল চিবুতে “ঘুমুতে উচ্চারণ ও বানান চলেছে। আজকাল বলছি। এইজন্যে যে, আমার নিজের কাছে এই উচ্চারণ ছিল অপরিচিত ও অব্যবহৃত। ‘চিবোতে 'ঘুমোতে শব্দের মূল রূপ :চিবাইতে ঘুমাইতে । আ+ইকে ঠেলে ফেলে নিঃসম্পৰ্কীয় উ এসে বসল। অবশ্য এর অন্য নজির আছে। বিনানি=বিনুনি, বিমানি=ঝিমুনি, পিটানি=পিটুনি শব্দ দেখা যাচ্ছে প্রথম বর্ণের ইকার তার সবর্ণ তৃতীয় বর্ণের পরে হস্তক্ষেপ করলে না, অথচ মধ্যবর্ণের আকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসিয়ে দিলে উ। মনে রাখতে হবে, প্ৰথম বর্ণের ইকার তার এই বন্ধু উকে নিমন্ত্রণের জন্যে দায়ী । গোড়ায় যেখানে ইকারের ইঙ্গিত নেই। সেখানে উপথ পায় না। ঢুকতে। পূর্বেই তার দৃষ্টান্ত দিয়েছি। "ঠ্যাঙনি হয় না 'ঠেঙুনি', 'ঠকানি হয় না। "ঠাকুনি', 'বাকানি হয় না “বাকুনি । চিবুতে ঘুমুতে উচ্চারণ আমার কানে ঠিক বলে ঠেকে না, সে যে নিতান্ত কেবল অভ্যাসের জন্যে তা আমি মানতে পারি। নে । বাংলা ভাষায় এ উচ্চারণ অনিবাৰ্য নয়। আমার বিশ্বাস ‘চিনাইতে শব্দকে কেউ চিনুতে বলে না, অন্তত আমার তাই ধারণা। “দুলাইতে কেউ কি দুলুতে, কিংবা দুটাইতে দুটুতে বলে ? “বুঝাইতে বলতে ‘বুকুতে কেউ বলে কি না নিশ্চিত জানি নে, আশা করি বলে না। ‘পুরাইতে বলতে ‘পুরুতে কিংবা ‘ঠকাইতে বলতে "ঠাকুতে শুনি নি। আমার নিশ্চিত বোধ হয় “কান জুডুল কেউ বলে না, অথচ "ঘুমাইল ও জুড়াইল একই ছাদের কথা । “আমাকে দিয়ে তার ঘোড়াটা কিনাইল বাক্যটা চলতি ভাষায় যদি বলে “আমাকে দিয়ে তার ঘোড়াটা কিনুল, আমার বোধ হয় সেটা বেআড়া শোনাবে। এই “শোনাবে' শব্দটা “শুনুবে হয়ে উঠতে বোধ হয় এখনো দেরি আছে। আমরা এক কালে যে-সব উচ্চারণে অভ্যন্ত ছিলুম এখন তার অন্যথা দেখি, যেমন : পেতোল (পিতোল), ভেতের (ভিতোর), তেতো (তিতে), সোন্দোর (সুন্দোর), ডাল দে (দিয়ে) মেখে খাওয়া, তার বে (বিয়ে) হয়ে গেল । উকারের ধ্বনি তার পরবতী অক্ষরেও প্ৰতিধ্বনিত হতে পারে, এতে আশ্চর্যের কথা নেই, যেমন : মুণ্ডু কুণ্ডু শুদুর রুদুর পুত্ত্বর মুগুর। তবু ‘কুণ্ডল ঠিক আছে, কিন্তু ‘কুণ্ডুলিতে লাগল। উকার। সুন্দর 'সুন্দরীতে কোনো উৎপাত ঘটে নি। অথচ 'গণনা' শব্দে অনাহুত উকার এসে বানিয়ে দিলে “গুণে । 'শয়ন থেকে হল ‘শুয়ে, ‘বয়ন থেকে “বুনে, চয়ন থেকে চুনে । বাংলা অকারের প্রতি বাংলাভাষায় অনাদরের কথা পূর্বেই বলেছি। ইকার-উকারের পূর্বে তার স্বরূপ লোপ হয়ে ও হয়। ঐ নিরীহ স্বরের প্রতি একারের উপদ্রবও কম নয়। উচ্চারণে তার একটা অকার-তাড়ানো ঝোক আছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাধারণ লোকের মুখের উচ্চারণে। বাল্যকালে প্ৰলয়-ব্যাপারকে ‘পোল্লায় ব্যাপার বলতে শুনেছি মেয়েদের মুখে । সমাজের বিশেষ স্তরে আজও এর BBB LBDLBS BBL BBSELL SLBLBLSSSBBD 0BS L LSLLLLLS ELL SLL LLLLS SLLLLLS HBuBB SLBBSS uBL BDBB BBLSSBuBZSSSLLLLLLS LLL SLLDS BB অপভ্রংশে প্রথম বর্ণে হস্তক্ষেপ না করে দ্বিতীয় বর্ণে বিনা কৈফিয়তে একার নিয়েছে বাসা, হয়েছে "পিণ্ডেস’, ‘পিত্তেয়, কখনো হয় ‘পেত্তয় । একারকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে ইকার এবং ঋকার, তারও ১। হিন্দীতে হাতুড়ি শব্দের প্রতিশব্দ ীলিঙ্গে” হতীেড়ি । বিহারীতে নীলিঙ্গে ‘হতউড়ি । ঔড়া এবং উরা প্রত্যয় থেকে উকারের প্রবেশ স্বাভাবিক। হিন্দিতেও চুম্বা ওকারকে উকারের মতো বলবার ও লেখবার প্রবৃত্তি আছে ; বোল্যবানা=বুলবনা, ফোঁড়বানা=স্কুড়বান, গোবর+ঐলা=গুবরৈলা ।