পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেলা y পড়ত। শহরের বাতি-নেবানো নীচের তলায়। ঘরে-বাইরে সন্ধ্যার আকাশ থম থম করত । ইডেন গার্ডেনে গঙ্গার ধারে শৌখিনদের হাওয়া খাইয়ে নিয়ে ফেরবার গাড়িতে সইসদের হৈ হৈ শব্দ রান্তা থেকে শোনা যেত। চৈৎ বৈশাখ মাসে রাস্তায় ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত “বরীফ" । হাঁড়িতে বরফ-দেওয়া নোনতা জলে ছোটাে ছোটো টিনের চোঙে থাকত যাকে বলা হত। কুলফির বরফ, এখন যাকে বলে আইস কিংবা আইসক্রিীম। রাস্তার দিকের বারান্দায় দাড়িয়ে সেই ডাকে মন কী রকম করত। তা মনই জানে। আর-একটা ইক ছিল “বেলফুল । বসন্তকালের সেই মালীদের ফুলের ঝুড়ির খবর আজ নেই, কেন জানি নে । তখন বাড়িতে মেয়েদের খোপা থেকে বেলফুলের গোড়ে-মালার গন্ধ ছড়িয়ে যেত বাতাসে। গা ধুতে যাবার আগে ঘরের সামনে বসে সমুখে হাত-আয়না রেখে মেয়েরা চুল বাধত। বিনুনি-করা চুলের দড়ি দিয়ে খোপা তৈরি হত নানা কারিগরিতে। তাদের পরনে ছিল ফরাসডাঙার কালাপেড়ে শাড়ি, পাক দিয়ে কুঁচকিয়ে তোলা । নাপতিনি আসত, ঝামা দিয়ে পা ঘষে আলতা পর্যাত । মেয়েমহলে তারাই লগত খবর চালাচালির কাজে । ট্রামের পয়দানের উপর ভিড় করে কলেজ। আর আপিস ফেরার দল ফুটবল খেলার ময়দানে ছুটত না। ফেরবার সময় তাদের ভিড় জমত না সিনেমা হলের সামনে । নাটক-অভিনয়ের একটা ফুর্তি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু কী আর বলব, আমরা সে সময়ে ছিলুম ছেলেমানুষ । তখন বড়োদের আমোদে ছেলেরা দূর থেকেও ভাগ বসাতে পেত না । যদি সাহস করে কাছাকাছি যৌতুম তা হলে শুনতে হত যাও খেলা করো গে, অথচ ছেলেরা খেলায় যদি উচিতমত গোল করত। তা হলে শুনতে হত "চুপ করো। বড়োদের আমোদ-আহলাদ সব সময় খুব যে চুপচাপে সারা হত তা নয়। তাই দূর থেকে কখনো কখনো ঝরনার ফেনার মতো তার কিছু কিছু পড়ত ছিটিকিয়ে আমাদের দিকে। এ বাড়ির বারান্দায় ঝুঁকে পড়ে তাকিয়ে থাকতুম, দেখতুম ও বাড়ির নাচঘর আলোয় আলোময়। দেউড়ির সামনে বড়ো রড়ো জুড়িগড়ি এসে জুটেছে। সদর দরজার কাছ থেকে দাদাদের কেউ কেউ অতিথিদের উপরে আগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গোলাপপাশ থেকে গায়ে গোলাপজল ছিটিয়ে দিচ্ছেন, হাতে দিচ্ছেন ছোটাে একটি করে তোড়া । নাটকের থেকে কুলীন মেয়ের যুঁপিয়ে কান্না কখনো কখনো কানে আসে, তার মর্ম বুঝতে পারি নে। বোঝবার ইচ্ছেটা হয় প্রবল। খবর পেতুম যিনি কঁদিতেন। তিনি কুলীন বটে, কিন্তু তিনি আমার ভগ্নীপতি’। তখনকার পরিবারের যেমন মেয়ে আর পুরুষ ছিল দুই সীমানায় দুই দিকে, তেমনি ছিল ছোটােরা আর বড়োরা। বৈঠকখানায় ঝাড়-লষ্ঠনের আলোয় চলছে নাচগান, গুড়গুড়ি টানছেন বড়োর দল, মেয়েরা লুকোনো থাকতেন ঝরোখার ও পারে, চাপা আলোয় পানের বাটা নিয়ে, সেখানে বাইরের মেন্ত্রেরা এসে জমতেন, ফিসফিস করে চলত গোরস্তালির খবর। ছেলেরা তখন বিছানায়। পিয়ারী কিংবা শংকরী গল্প (चीनी: ; कigन अनt ‘জোচ্ছনায় যেন ফুল ফুটেছে R আমাদের সময়কার কিছু পূর্বোিধনীঘরে ছিল শখের যাত্রার চলন। মিহিগলাওয়ালা ছেলেদের বাছাই করে নিয়ে দল বাধার ধুম ছিল। আমার মেজকাকা ছিলেন এইরকম একটি শখের দলের দলপতি । পালা রচনা করবার শক্তি ছিল তার, ছেলেদের তৈরি করে তোলবার উৎসাহ ছিল । ধনীদের ঘরপোষা এই যেমন শখের যাত্র তেমনি ব্যাবসাদারী যাত্রা নিয়েও বাংলাদেশের ছিল ভারি নেশা । এ পাড়ায় ও ১ যমুনাথ মুখােপাধ্যায়, শরৎকুমারী দেবীর স্বামী