পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৩২ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী অথচ তার ভার নেই যেন। খোলা মাঠের ভিতর দিয়ে দুপুরবেলার রৌদ্রে চলল সে দীেড়ে। কী সুন্দর সহজ চলনের বেগ । মাঠে ফসল ছিল না। দুটন্ত বাঘকে ভরপুর করে দেখবার জায়গা এই বাটেসেই রৌদ্র,ঢালা হলদে রঙের প্রকাণ্ড মাঠ । আর-একটা কথা বাকি আছে, শুনতে মজা লাগতে পারে। শিলাইদহে মালী ফুল তুলে এনে ফুলদানিতে সাজিয়ে দিত। আমার মাথায় খেয়াল গেল ফুলের রঙিন রস দিয়ে কবিতা লিখতে।” টিপে টিপে যে রসাটুকু পাওয়া যায় সে কলমের মুখে উঠতে চায় না। ভাবতে লাগলুম, একটা কল তৈরি করা চাই। দোওয়ালা একটা কাঠের বাটি, আর তার উপরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চালাবার মতো একটা হামানদিন্তের নোড়া হলেই চলবে । সেটা ঘোরানো যাবে দাড়িতে-বাধা একটা ঢাকায় । জ্যোতিদাদাকে দরবার জানালুম। হয়তো মনে মনে তিনি হাসলেন, বাইরে সেটা ধরা পড়ল না। হুকুম করলেন, ছুতার এল কাঠকোঠ নিয়ে। কল তৈরি হল। ফুলে-ভরা কাঠের বাটিতে দড়িতে বাধা নোড়া যতই ঘোরাতে থাকি ফুল পিষে কাদা হয়ে যায়, রস বেরীয় না। জ্যোতিদাদা দেখলেন, ফুলের রস আর কলের চাপে ছন্দ মিলল না। তবু আমার মুখের উপর হেসে উঠলেন না। জীবনে এই একবার এঞ্জিনিয়ারি করতে নেবেছিলুম। যে যা নয় নিজেকে তাই যখন কেউ ভাবে তার মাথা হেঁট করে দেবার এক দেবতা তৈরি থাকেন, শাত্রে এমন কথা আছে । সেই দেবতা সেদিন আমার এন্জিনিয়ারির দিকে কটাক্ষ করেছিলেন, তার পর থেকে যন্ত্ৰে হাত লাগানো আমার বন্ধ, এমনকি, সেতারে এসরাজেও তার চড়াই নি । জীবনস্মৃতিতে লিখেছি, ফ্লটিলা কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের নদীতে স্বদেশী জাহাজ চালাতে গিয়ে কী করে জ্যোতিদাদা নিজেকে ফতুর করে দিলেন । বউঠাকরুনের মৃত্যু হয়েছে তার আগেই ২ জ্যোতিদাদা তার তেতালার বাসা ভেঙে চলে গেলেন । শেষকালে বাড়ি বানালেন রাচির এক পাহাড়ের উপর ।” S SR এইবার তেতলা ঘরের আর-এক পালা আরম্ভ হল আমার সংসার নিয়ে - একদিন গোলাবাড়ি, পালকি, আর তেতলার ছাদের খালি ঘরে আমার ছিল যেন বেদের বাসাকখনো এখানে, কখনো ওখানে । বউঠাকরুন। এলেন, ছাদের ঘরে বাগান দিল দেখা । উপরের ঘরে এল পিয়ানো, নতুন নতুন সুরের ফোয়ারা ছুটিল । পূর্ব দিকের চিলেকোঠার ছায়ায় জ্যোতিদাদার কফি খাওয়ার সরঞ্জাম হােত সকালে। সেই সময়ে পড়ে শোনাতেন তার কোনো-একটা নতুন নাটকের প্রথম খসড়া । তার মধ্যে কখনো কখনো কিছু জুড়ে দেবার জন্যে আমাকেও ডাক পড়ত আমার অত্যন্ত কঁচা হাতের লাইনের জন্যে। ক্রমে রোদ এগিয়ে আসত— কাকগুলো ডাকাডাকি করত উপরের ছাদে বসে রুটির টুকরোর পরে লক্ষ করে। দশটা বাজলে ছায়া যেত ক্ষীয়ে, ছাতটা উঠত। তেন্তে । দুপুরবেলায় জ্যোতিদাদা যেতেন নীচের তলায় কাছারিতে। বউঠাকরুন। ফলের খোসা ছড়িয়ে কেটে কেটে যত্ন করে রুপোর ব্লেকাবিতে সাজিয়ে দিতেন। নিজের হাতের মিষ্টান্ন কিছু কিছু থাকত তার সঙ্গে, আর তার উপরে ছড়ানো হত গোলাপের পাপড়ি । গোলাসে থাকত ডাবের জল কিংবা ফলের রস কিংবা কচি তালাশাস বরফে-ঠাণ্ড-করা । সমান্তটার উপর একটা ফুলকটা রেশমের রুমাল ঢেকে মোেরাদবাদি খুঞ্চোতে করে জলখাবার কেলা একটা-দুটোর সময় রওনা করে দিতেন। কাছারিতে । ১ দ্রষ্টব্য ১৯-সংখ্যক কবিতা- জন্মদিনে । রবীন্দ্র রচনাবলী 9qft ve S iw carn, SSR88 ৩ শক্তিধাম, রচিয় মোরাবাদী পাহাড়ে