পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SOO - রবীন্দ্র-রচনাবলী ভালোবাসার থামোমিটারে তিন মাত্রার উত্তাপ আছে । মানুষ যখন বলে “ভালোবাসি নে সেটা হল ৯৫ ডিগ্রি, যাকে বলে সাবনর্মাল । যখন বলে “ভালোবাসি সেটা হল নাইন্টি-এইট পয়েন্ট ফোর, ডাক্তাররা তাকে বলে নর্মািল, তাতে একেবারে কোনো বিপদ নেই। কিন্তু প্ৰেমজুর যখন ১০৫ ছাড়িয়ে গেছে তখন রুগি আদর করে বলতে শুরু করেছে “পোড়ারমুখি, তখন চন্দ্ৰবদনীটা একেবারে সাফ ছেড়ে দিয়েছে । যারা প্ৰবীণ ডাক্তার তারা বলে এইটেই হল মরণের লক্ষণ । বড়োবাউ, নিশ্চয় জেনো, বন্ধুমহলে আমিও যখন প্ৰলাপ বাকি, তোমাকে যা না বলবার তাই বলি, তখন সেটা প্ৰণয়ের ডিলিরিয়ম, তখন বাধা আদরের ভাষায় একেবারে কুলোয় না ; গাল দিতে না পারলে ভালোবাসার ইস্টিমের চাপে বুক ফেটে যায়, বিশ্ৰী রকমের অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে । নাড়ী রসস্থ হলে তাতে ভাষা যে কিরকম এলোমেলো হয়ে ওঠে, তা সেই ডাক্তারই বোঝে রসবোধের যে একেবারে এম. ডি. । ক্ষান্তমণি । রক্ষে করো, আমার অন্ত ডাক্তারি জানা নেই । চন্দ্ৰকান্ত । সে তো ব্যবহারেই বুঝতে পারি। নইলে লয়ালটিকে সিডিশন বলে সন্দেহ করবে। কেন । কিন্তু নিশ্চয় রুগির দশা তোমাকেও মাঝে মাঝে ধরে । আচ্ছা, কলতলায় দাড়িয়ে তুমি কখনো পদ্মঠাকুরঝিকে বলো নি— আমার এমনি কপাল যে বিয়ে করে ইস্তিক সুখ কাকে বলে একদিনের তরে জানলুম না ? আমার কানে যদি সে কথা আসত তা হলে আনন্দে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত । ক্ষান্তমণি । আমি পদ্মঠাকুরঝিকে কখখনো আমন কথা বলি নি । চন্দ্ৰকান্ত । আচ্ছা, তা হলে সাফ চান্দরটা এনে দাও । ক্ষান্তমণি । (চাদর আনিয়া দিয়া) তুমি বাইরে বেরোচ্ছি। যদি, চুলগুলো ক্যাগের বাসার মতো করে বেরিয়ো না । একটু বোসো, তোমার চুল ঠিক করে দিই । চন্দ্ৰকান্ত । হয়েছে, হয়েছে । ক্ষান্তমণি । না হয় নি, একদণ্ড মাথা স্থির করে রাখো দেখি । চন্দ্ৰকান্ত । তোমার সামনে আমার মাথার ঠিক থাকে না, দেখতে দেখতে ঘুরে যায়— ক্ষান্তমণি । অত ঠাট্টায় কাজ কী ! নাহয় আমার রূপ নেই, গুণ নেই- একটা ললিতলবঙ্গলতা খোজ করে আনো গে, আমি চললুম। [[চিরুনি ব্ৰস ফেলিয়া দ্রুত প্ৰস্থান চন্দ্ৰকান্ত । এখন আর সময় নেই, ফিরে এসে রাগ ভাঙাতে হবে । বিনোদ (নেপথ্য হইতে) । ওহে, আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে ? তোমাদের প্ৰেমাভিনয় সাঙ্গ হল কি ? চন্দ্ৰকান্ত । এইমাত্র যবনিকাপাতন হয়ে গেল । হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি । [ প্ৰস্থান তৃতীয় দৃশ্য নিবারণের বাড়ি নিবারণ ও শিবচরণ নিবারণ । তবে তাই ঠিক রইল ? এখন আমার ইন্দুমতীকে তোমার গদাইয়ের পছন্দ হলে হয় । শিবচরণ । সে বেটার আবার পছন্দ কী ! বিয়েটা তো আগে হয়ে যাক, তার পর পছন্দ সময়মত পরে করলেই হবে । নিবারণ। না ভাই, কালের যেরকম গতি সেই অনুসারেই চলতে হয় ।