পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি w ○ と > এইটে হচ্ছে আমাদের অশক্তির সব চেয়ে বড়ো ট্যাকসো । মানুষের সকল সমস্যা সমাধানের মূলে হচ্ছে তার সুশিক্ষা । আমাদের দেশে তার রাস্তা বন্ধ, কারণ ‘ল অ্যান্ড অর্ডার” আর কোনো উপকারের জন্যে জায়গা রাখলে না, তহবিল একেবারে ফাকা । আমি দেশের কাজের মধ্যে একটি কাজকেই শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নিয়েছিলুম ; জনসাধারণকে আত্মশক্তিতে প্রতিষ্ঠা দেবার শিক্ষা দেব বলে এতকাল ধরে আমার সমস্ত সামর্থ্য দিয়েছি । এজন্যে কর্তৃপক্ষের আনুকূল্যও আমি প্রত্যাখ্যান করতে চাই নি, 'প্ৰত্যাশাও করেছি, কিন্তু তুমি জান কতটা ফল পেয়েছি । বুঝতে পেরেছি, হবার নয় | মস্ত আমাদের পাপ, আমরা অশক্ত । তাই যখন শুনলুম, রাশিয়াতে জনসাধারণের শিক্ষা প্রায় শূন্য অঙ্ক থেকে প্রভূতপরিমাণে বেড়ে গেছে, তখন মনে মনে ঠিক করলুম, ভাঙা শরীর আরো যদি ভাঙে তো ভাঙুক, ওখানে যেতেই হবে । এরা জেনেছে, অশক্তকে শক্তি দেবার একটিমাত্র উপায় শিক্ষা- অন্ন স্বাস্থ্য শান্তি সমস্তই এরই ’পরে নির্ভর করে । ফাকা ‘ল অ্যান্ড অর্ডার নিয়ে না ভরে পেট, না ভরে মন । অথচ তার দাম দিতে গিয়ে সর্বস্ব বিকিয়ে গেল । আধুনিক ভারতবর্ষের আবহাওয়ায় আমি মানুষ, তাই এতকাল আমার মনে দৃঢ় ধারণা ছিল, প্ৰায় তেত্ৰিশ কোটি মুখকে বিদ্যাদান করা অসম্ভব বললেই হয় ; এজন্য আমাদের মন্দ ভাগ্য ছাড়া আর কাউকে বুঝি দোষ দেওয়া চলে না । যখন শুনেছিলুম, এখানে চাষী ও কমীদের মধ্যে শিক্ষা হু হু করে এগিয়ে চলেছে আমি ভেবেছিলুম, সে শিক্ষা বুঝি সামান্য একটুখানি পড়া ও লেখা ও অঙ্ক কষা— কেবলমাত্র মাথা-গুনতিতেই তার গৌরব । সেও কম কথা নয় । আমাদের দেশে তাই হলেই রাজাকে আশীৰ্বাদ করে বাড়ি চলে যে তুম । কিন্তু এখানে দেখলুম, বেশ পাকা রকমের শিক্ষা, মানুষ করে তোেলবার উপযুক্ত, নোট মুখস্থ করে এম. এ. পাস করবার মতন নয় । কিন্তু এ সব কথা আর-একটু বিস্তারিত করে পরে লিখব, আজ আর সময় নেই । আজই সন্ধ্যাবেলায় বর্লিন অভিমুখে যাত্রা করব । তার পরে ৩রা অক্টোবর আটলান্টিক পাড়ি দেব- কত দিনের মেয়াদ আজও নিশ্চিত করে বলতে পারছি নে । কিন্তু, শরীর মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না । তবু এবারকার সুযোগ ছাড়তে সাহস হয় না- যদি কিছু কুড়িয়ে আনতে পারি তা হলেই বাকি যে-কটা দিন বঁচি বিশ্রাম করতে পারব । নইলে দিনে দিনে মূলধন খুইয়ে দিয়ে অবশেষে বাতি নিবিয়ে দিয়ে বিদায় নেওয়া সেও মন্দ প্ল্যান নয় ; সামান্য কিছু উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে রেখে গেলে জিনিসটা নোংরা হয়ে উঠবে । সম্বল যতই কমে আসতে থাকে মানুষের আন্তরিক দুর্বলতা ততই ধরা পড়ে— ততই শৈথিল্য, ঝগড়ার্বাটি, পরস্পরের বিরুদ্ধে কানাকানি । ঔদার্য ভরাউন্দরের উপরে অনেকটা নির্ভর করে । কিন্তু যেখানেই যথার্থ সিদ্ধির একটি চেহারা দেখতে পাই সেখানেই দেখা যায় সেটা কেবলমাত্র টাকা দিয়ে হাটে কেনবার নয়— দারিদ্র্যের জমিতেই সে সোনার ফসল ফলায় । এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় যে অক্লান্ত উদ্যম, সাহস, বুদ্ধিশক্তি, যে আত্মোৎসর্গ দেখলুম, তার অতি অল্প পরিমাণ থাকলেও কৃতাৰ্থ হতুমি । আন্তরিক শক্তি ও অকৃত্রিম উৎসাহ যত কম থাকে টাকা খুঁজতে छ्या! ততই বেশি। করে । ইতি Sa Çistorik Stooo 8 মস্কেী থাকতে সোভিয়েট ব্যবস্থা সম্বন্ধে দুটাে বড়ো বড়ো চিঠি লিখেছিলুম। সে চিঠি কবে পাবে এবং °ोंद कि ना की छानि । বর্লিনে এসে একসঙ্গে তোমার দুখানা চিঠি পাওয়া গেল । ঘন বর্ষার চিঠি, শান্তিনিকেতনের আকাশে শালবনের উপরে মেঘের ছায়া এবং জলের ধারায় শ্রাবণ ঘনিয়ে উঠেছে, সেই ছবি মনে জাগলে আমার চিত্ত কিরকম উৎসুক হয়ে ওঠে সে তোমাকে বলা বাহুল্য ।