পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻g两 ©(፩(፩ রাজীব কহিল, “আমার সাহেব এখােন হইতে সোনাপুরের কুঠিতে বদলি হইতেছেন, আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছেন ৷” 静 মহামায়া আবার অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। ভাবিয়া দেখিল, দুইজনের জীবনের গতি দুই দিকেএকটা মানুষকে চিরদিন নজরবন্দি করিয়া রাখা যায় না। তাই চাপা ঠোঁট ঈষৎ খুলিয়া কহিল, “আচ্ছা।” সেটা কতকটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাসের মতো শুনাইল । أم কেবল এই কথাটুকু বলিয়া মহামায়া পুনশ্চ গমনোদ্যত হইতেছে, এমন সময় রাজীব চমকিয়া উঠিয়া মহামায়া দেখিল, ভবানীচরণ মন্দিরের অভিমুখে আসিতেছে, বুঝিল তাহাদের সন্ধান পাইয়াছে। রাজীব মহামায়ার বিপদের সম্ভাবনা দেখিয়া মন্দিরের ভগ্নাভিত্তি দিয়া লাফাইয়া বাহির হইবার চেষ্টা করিল। মহামায়া সবলে তাহার হাত ধরিয়া আটক করিয়া রাখিল। ভবানীচরণ মন্দিরে প্রবেশ করিল- কেবল একবার নীরবে: নিস্তব্ধভাবে উভয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। মহামায়া রাজীবের দিকে চাহিয়া অবিচলিত ভাবে কহিল, “রাজীব, তোমার ঘরেই আমি যাইব । তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিয়ো ।” r ভবানীচরণ নিঃশব্দে মন্দির হইতে বাহির হইলেন, মহামায়াও নিঃশব্দে তাহার অনুগমন করিল— আর, রাজীব হতবুদ্ধি হইয়া দাড়াইয়া রহিল— যেন তাহার ফাঁসির হুকুম হইয়াছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সেই রাত্ৰেই ভবানীচরণ একখানা লাল চলি আনিয়া মহামায়াকে বলিলেন, “এইটে পরিয়া আইস ।” মহামায়া পরিয়া আসিল । তাহার পর বলিলেন, “আমার সঙ্গে চলো।” ভবানীচরণের আদেশ, এমন-কি, সংকেতও কেহ কখনো অমান্য করে নাই। মহামায়াও না । সেই রাত্রে উভয়ে নদীতীরে শ্মশান-অভিমুখে চলিলেন। শ্মশান বাড়ি হইতে অধিক দূর নহে। সেখানে গঙ্গাযাত্রীর ঘরে একটি বৃদ্ধ ব্ৰাহ্মণ মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। তাহারই শয্যাপার্থে উভয়ে গিয়া দাঁড়াইলেন। ঘরের এক কোণে পুরোহিত ব্ৰাহ্মণ উপস্থিত ছিল, ভবানীচরণ তাঁহাকে ইঙ্গিত করিলেন। সে অবিলম্বে শুভানুষ্ঠানের আয়োজন করিয়া লইয়া প্রস্তুত হইয়া দাড়াইল ; মহামায়া বুঝিল, এই মুমূর্ষর সহিত তাহার বিবাহ। সে আপত্তির লেশমােত্রও প্রকাশ করিল না। দুইটি অদূরবতী চিতার আলোকে অন্ধকারপ্রায় গৃহে মৃত্যু যন্ত্রণার আর্তব্বনির সহিত অস্পষ্ট মন্ত্ৰোচ্চারণ মিশ্ৰিত করিয়া মহামায়ার বিবাহ হইয়া গেল। : যেদিন বিবাহ তাহার পরদিনই মহামায়া বিধবা হইল। এই দুর্ঘটনায় বিধবা অতিমাত্র শোক অনুভব করিল না— এবং রাজীবও মহামায়ার অকস্মাৎ বিবাহসংবাদে যেরূপ বজ্ৰাহত হইয়াছিল, বৈধব্যসংবাদে সেইরূপ হইল না। এমনকি, কিঞ্চিৎ প্রফুল্ল বােধ করিতে লাগিল। কিন্তু সে-ভােব অধিকক্ষণ স্থায়ী হইল না। দ্বিতীয় আর-একটা বজ্ৰাঘাতে রাজীবকে একেবারে ভূপাতিত করিয়া ফেলিল। সে সংবাদ পাইল, শ্মশানে আজ ভারি ধুম। মহামায়া সহমৃতা হইতেছে। Y প্রথমেই সে ভাবিল, সাহেবকে সংবাদ দিয়া তাহার সাহায্যে এই নিদারুণ ব্যাপার বলপূর্বক রহিত করিবে। তাহার পরে মনে পড়িল, সাহেব আজই বদলি হইয়া সোনাপুরে রওনা হইয়াছে- রাজীবকেও সঙ্গে লইতে চাহিয়াছিল। কিন্তু রাজীব একমাসের ছুটি লইয়া থাকিয়া গেছে। মহামায় তাহাকে বলিয়াছে, “তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিয়ো ।” সে কথা সে কিছুতেই লঙ্ঘন করিতে পারে না। আপাতত এক মাসের ছুটি লইয়াছে, আবশ্যক হইলে দুই মাস, ক্রমে তিন মাস- এবং অবশেষে সাহেবের কম হাড়িয়া দিয়া দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া খাইবে, তবু চিরজীবন অপেক্ষা করিতে शठित ना । ·函 রাজীব যখন পাগলের মতো ছুটিয়া হয় আত্মহত্যা নয় একটা কিছু করিবার উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময় সন্ধ্যাকালে মুষলধারায় বৃষ্টির সহিত একটা প্ৰলয়-বড় উপস্থিত হইল। এমনি ঝড় যে রাজীবের মনে