পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外雷g灭 w9ዓ6 রাজকন্যা চামর করিতে লাগিলেন। তঁহার হাতের বালাতে চুড়িতে ঠুং ঠাং শব্দ হইতে লাগিল। রাজার আহার হইয়া গেল । , পরদিন ঘুম হইতে উঠিয়া বাহিরে আসিয়া রাজা দেখিলেন, একটি ব্ৰাহ্মণের ছেলে রাজবাড়ির বাহিরে জঙ্গল হইতে শুকনা কাঠ সংগ্ৰহ করিতেছে। তাহার বয়স বছর সাত-আট হইবে। রাজা বললেন,ইহারই সহিত আমার মেয়ের বিবাহ দিব। রাজার হুকুম কে লঙ্ঘন করিতে পারে, তখনই ছেলেটিকে ধরিয়া তাহার সহিত রাজকন্যার মালাবদল করিয়া দেওয়া হইল। " আমি এই জায়গাটাতে দিদিমার খুব কাছ ঘেঁধিয়া খুব নিরতিশয় ঔৎসুক্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলামতার পরে ? নিজেকে সেই সাত-আট বৎসরের সৌভাগ্যবান কাঠকুড়ানে ব্ৰাহ্মণের ছেলের স্থলাভিষিক্ত করিতে কি একটুখানি ইচ্ছা যায় নাই। যখন সেই রাত্রে ঝুপ কুপ বৃষ্টি পড়িতেছিল, মিটমিট করিয়া প্ৰদীপ৷ জ্বলিতেছিল এবং গুন গুন স্বরে দিদিমা মশারির মধ্যে গল্প বলিতেছিলেন, তখন কি বালক হৃদয়ের বিশ্বাসপরায়ণ রহস্যময় অনাবিষ্কৃত এক ক্ষুদ্র প্রান্তে এমন একটি অত্যন্ত সম্ভবপর ছবি জাগিয়া উঠে নাই যে, সেও একদিন সকালবেলায় কোথায় এক রাজার দেশে রাজার দরজায় কাঠ কুড়াইতেছে, হঠাৎ একটি সোনার প্রতিমা লক্ষ্মীঠাকরুনটির মতো রাজকন্যার সহিত তাহার মাল-বদল হইয়া গেল ; মাথায় তাহার সিঁথি, কানে তাহার দুল, গলায় তাহার কক্ট, হাতে তাহার কােকন, কটিতে তাহার চন্দ্রহার, এবং আলতাপরা দুটি পয়ে নূপুর ঝম বাম করিয়া বাজিতেছে। কিন্তু আমার সেই দিদিমা যদি লেখকজন্ম ধারণ করিয়া আজকালকার সেয়ানা পাঠকদের কাছে এই গল্প বলিতেন তবে ইতিমধ্যে তঁহকে কত হিসাব দিতে হইত। প্রথমত রাজা যে বারো বৎসর বনে বসিয়া থাকেন এবং ততদিন রাজকন্যার বিবাহ হয় না, একবাক্যে সকলেই বলিত ইহা অসম্ভব। সেটুকুও যদি কোনো গতিকে গোলমালে পার পাইয়া যাইত, কিন্তু কন্যার বিবাহের জায়গায় বিষম একটা কলরব উঠিত । একে তো এমন কখনো হয় না, দ্বিতীয়ত সকলেই আশঙ্কা করিত ব্ৰাহ্মণের ছেলের সহিত ক্ষত্ৰিয়কন্যার বিবাহ ঘটাইয়া লেখক নিশ্চয়ই ফাকি দিয়া সমাজবিরুদ্ধ মত প্রচার করিতেছেন। কিন্তু পাঠকেরা তেমন ছেলেই নয়, তাহারা তাহার নাতি নয় যে সকল কথা চুপ করিয়া শুনিয়া যাইবে! তাহারা কাগজে সমালোচনা করবে। অতএব একান্তমনে প্রার্থনা করি, দিদিমা যেন পুনর্বাের দিদিমা হইয়াই জন্মগ্রহণ করেন, হতভাগ্য নাতিটার মতো তঁহাকে গ্ৰহদোষে যেন লেখক না হইতে হয় । আমি একেবারে পুলকিত কম্পান্বিত হৃদয়ে জিজ্ঞাসা করিলাম, তার পরে ? দিদিমা বলিতে লাগিলেন, তার পরে রাজকন্যা মনের দুঃখে তাহার সেই ছোটাে স্বামীটিকে লইয়া চলিয়া Sai অনেক দূরদেশে গিয়া একটি বৃহৎ অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া সেই ব্ৰাহ্মণের ছেলেটিকে, আপনার সেই অতি ক্ষুদ্র স্বামীটিকে বড়ো যত্নে মানুষ করিতে লাগিল। আমি একটুখানি নড়িয়া-চড়িয়া পাঁশবালিশ আরো একটু সাবলে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলাম, তার পরে ? দিদিমা কহিলেন, তার পরে ছেলেটি পুঁথি হাতে প্রতিদিন পাঠশালে যায়। এমনি করিয়া গুরুমহাশয়ের কাছে নানা বিদ্যা শিখিয়া ছেলেটি ক্রমে যত বড়ো হইয়া উঠিতে লাগিল ততই তাহার সহপাঠীরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, ঐ যে সাতমহলা বাড়িতে তোমাকে লইয়া থাকে সেই মেয়েটি তোমার কে হয়। ব্ৰাহ্মণের ছেলে তো ভাবিয়া অস্থির, কিছুতেই ঠিক করিয়া বলিতে পারে না, মেয়েটি তাহার কে হয়। একটু একটু মনে পড়ে- একদিন সকালে রাজবাড়ির দ্বারের সম্মুখে শুকনা কাঠ কুড়াইতে গিয়াছিলকিন্তু সেদিন কী একটা মস্ত গোলমালে কাঠ কুড়ানো হইল না। সে অনেক দিনের কথা, সে কি কিছু মনে আছে। এমন করিয়া চারি-পাঁচ বৎসর যায়। ছেলেটিকে রোজই তাহার সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছ, ঐ যে সাতমহলা বাড়িতে পরামরূপসী মেয়েটি থাকে, ও তোমার কে হয় ।” ব্ৰাহ্মণ একদিন পাঠশালা হইতে মুখ বড়ো বিমর্ষকরিয়া আসিয়া রাজকন্যাকে কহিল, “আমাকে আমার