পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዒbr রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বিতীয় । দেখে দাদা, আজকের দিনে মনে একটা কথা বড়ো লাগছে। ঠাকুরদা। কী বল দেখি । দ্বিতীয় । এবার দেশবিদেশের লোক এসেছে। সবাই বলছে, সবই দেখছি ভালো, কিন্তু রাজা দেখি নে কেন । কাউকে জবাব দিতে পারি নে। আমাদের দেশে ঐটে একটা বড়ো ফাঁকা রয়ে গেছে। ঠাকুরদা। ফাকা ! আমাদের দেশে রাজা এক জায়গায় দেখা দেয় না বলেই তো সমস্ত রাজ্যটা একেবারে রাজায় ঠাসা হয়ে রয়েছে- তাকে বল ফাকা ! সে যে আমাদের সবাইকেই রাজা করে দিয়েছে ! এই-যে অন্য রাজাগুলো, তারা তো উৎসবটাকে দ’লে ম’লে ছারখার করে দিলে- তাদের হাতি-ঘোড়া লোক-লশকরের তাড়ায় দক্ষিণ-হাওয়ার দাক্ষিণ্য আর রইল না, বসন্তর যেন দম আটকাবার জো হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজা নিজে জায়গা জোড়ে না, সবাইকে জায়গা ছেড়ে দেয় । কবিকেশরীর সেই গানটা তো জানিস । 히F নইলে মোদের রাজার সনে মিলব। কী স্বত্বে ।-- আমরা সবাই রাজা । আমরা যা খুশি তাই করি, আমরা নই বাধা নাই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব। কী স্বত্বে ।-- আমরা সবাই রাজা । সে মান আপনি ফিরে পান, মোদের খাটো করে রাখে নি। কেউ কোনো অসত্যে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব। কী স্বত্বে ।-- আমরা সবাই রাজা । আমরা চলব। আপন মতে, শেষে মিলব তারি পথে । মোরা মরব না কেউ বিফলতার বিষম আবর্তে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব। কী স্বত্বে ||- আমরা সবাই রাজা ৷ তৃতীয়। কিন্তু দাদা, যা বল, তাকে দেখতে পায় না বলে লোকে অনায়াসে তার নামে যা খুশি বলে সেইটো অসহ্য হয় । প্ৰথম । এই দেখো-না, আমাকে গাল দিলে শান্তি আছে, কিন্তু রাজাকে গাল দিলে কেউ তার মুখ বন্ধ করবারই নেই । - ঠাকুরদা। ওর মানে আছে। প্রজার মধ্যে যে রাজটুকু আছে তারই গায়ে আঘাত লাগে, তার বাইরে যিনি তার গায়ে কিছুই বাজে না । সূর্যের যে তেজ প্রদীপে আছে তাতে ফুটুকু সয় না, কিন্তু হাজার লোকে মিলে সূর্যে ফু দিলে সূর্য অস্নান হয়েই থাকেন। বিশ্ববসু ও বিরূপক্ষের প্রবেশ । বিশ্ববসু। এই যে ঠাকুরদা, এই দেখাে, এই লােকটা রটিয়ে বেড়াচ্ছে—আমাদের রাজাকে কুৎসিত দেখতে, তাই তিনি দেখা দেন না ।