পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oor রবীন্দ্র-রচনাবলী বসন্ত-উৎসবের এই স্মৃতিচিহ্ন বাইরে যত মলিন হয়ে আসছে অন্তরে ততই নবীন হয়ে বিকশিত হচ্ছে। সুদৰ্শন। চুপ কর, চুপ কর, আমাকে আর দগ্ধ করিস নে । সুরঙ্গমা। ঐ দেখো, সভায় রাজারা সব বসেছেন। ঐ র্যার গায়ে কোনো আভরণ নেই, কেবল মুকুটে একটি ফুলের মালা জড়ানো, উনিই হচ্ছেন কান্ধীর রাজা । সুবর্ণ র্তার পিছনে ছাতা ধরে দাড়িয়ে আছে । সুদৰ্শন । ঐ সুবৰ্ণ ! তুই সত্যি বলছিস ? সুরঙ্গমা। হাঁ মা, আমি সত্যি বলছি। সুদৰ্শন। ওকেই আমি সেদিন দেখেছিলুম ? না, না। সে আমি আলোতে অন্ধকারে বাতাসে গন্ধেতে মিলে আর-একটা কী দেখেছিলুম। ও নয়, ও নয় । সুরঙ্গমা | সকলে তো বলে, ওকে চোখে দেখতে সুন্দর। সুদৰ্শন । ঐ সুন্দরেও মন ভোলে ! আমার এ পাপ-চোখকে কী দিয়ে ধুলে এর গ্লানি চলে যাবে। সুরঙ্গমা। সেই কালোর মধ্যে ডুবিয়ে ধুতে হবে- সেই আমার রাজার সকল-রূপ-ডোবানাে রূপের মধ্যে। রূপের কালি যা-কিছু চোখে লেগেছে সব যাবে। সুদৰ্শন । কিন্তু সুরঙ্গমা, এমন ভুলেও মানুষ ভোলে কেন । সুরঙ্গমা । ভুল ভাঙবে বলে ভোলে । প্ৰতিহারী । (প্ৰবেশ করিয়া) স্বয়ংবরসভায় রাজারা অপেক্ষা করে আছেন । [প্ৰস্থান সুদৰ্শন । সুরঙ্গমা, আমার অবগুণ্ঠনের চাদরখানা নিয়ে আয় গে। [সুরঙ্গমার প্রস্থান রাজা, আমার রাজা ! তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ, উচিত বিচারই করেছ। কিন্তু আমার অন্তরের কথা কি তুমি জানবে না । (বুকের বসনের ভিতর হইতে ছুরিকা বাহির করিয়া) দেহে আমার কলুষ লেগেছে, এ দেহ আজ আমি সবার সমক্ষে ধূলোয় লুটিয়ে যাব । কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে আমার দাগ লাগে নি- বুক চিরে সেটা কি তোমাকে আজ জানিয়ে যেতে পারব না । তোমার সেই মিলনের অন্ধকার ঘরটি আমার হৃদয়ের ভিতরে আজ শূন্য হয়ে রয়েছে- সেখানকার দরজা কেউ খোলে নি প্ৰভু। সে কি খুলতে তুমি আর আসবে না। তবে দ্বারের কাছে তোমার বীণা আর বাজবে না ? তবে আসুক মৃত্যু, আসুক- সে তোমার মতোই কালো, তোমার মতোই সুন্দর, তোমার মতোই সে মন হরণ করতে জানে। সে তুমিই, সে তুমি । গান এ অন্ধকার ডুবাও তোমার অতল অন্ধকারে, ওহে অন্ধকারের স্বামী ! এসো নিবিড়, এসো গভীর, এসো জীবনপারে, আমার চিত্তে এসো নামি । এ দেহমান মিলায়ে যাক, হইয়া যাক হারা, ওহে অন্ধকারের স্বামী ! ж. বাসনা মোর, বিকৃতি মোর, আমার ইচ্ছাধারা ওই চরণে যাক থামি। নির্বাসনে বাধা আছি। দুর্বাসিনার ডোরে, ওহে অন্ধকারের স্বামী । সব বাধনে তোমার সাথে বন্দী করো মোরে, ওহে, আমি বঁাধনকামী ।