পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V90 Ve রবীন্দ্র-রচনাবলী “সেই মোড়ক কে” তোমাকে দিয়েছিল বলে ।” “হাবলু।” “হাবলু ! তা নিয়ে এত ঢাকাঢাকি কেন ?” “ঠিক বলতে পারি। নে ৷” “আর কেউ তার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে ?” i "ן וף" "? 68ס" “ঐ পর্যন্তই ; আর কোনো কথা নেই।” “তবে এত লুকোচুরি কেন ?” “তুমি বুঝতে পারবে না ।” । কুমুর হাত চেপে ধরে ঝাকানি দিয়ে মধু বললে, “অসহ্য তোমার বাড়াবাড়ি ।” কুমুর মুখ লাল হয়ে উঠল, শান্ত স্বরে বললে, “কী চাও তুমি, বুঝিয়ে বলো । তোমাদের চােল আমার অভ্যোস নেই সে কথা মানি ।” মধুসূদনের কপালের শিরদুটাে ফুলে উঠল । কোনো জবাব ভেবে না পেয়ে ইচ্ছে হল ওকে মারে । এমন সময় বাইরে থেকে গলা-খাকারি শোনা গেল, সেইসঙ্গে আওয়াজ এল, “আপিসের সায়েব এসে বসে আছে।” মনে পড়ল। আজ ডাইরেক্টরদের মীটিং। লজ্জিত হল যে সে এজন্যে প্ৰস্তুত হয় নি— সকালটা প্ৰায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ গেছে। এতবড়ো শৈথিল্য এতই ওর স্বভাব ও অভ্যাস -বিরুদ্ধ যে, এটা সম্ভব হল দেখে ও নিজে স্তম্ভিত । 8 O মধুসূদন চলে যেতেই কুমু খাট থেকে নেমে মেজের উপর বসে পড়ল। চিরজীবন ধরে এমন সমুদ্রে কি তাকে সাতার কাটতে হবে যার কূল কোথাও নেই ? মধুসূদন ঠিকই বলেছে। ওদের সঙ্গে তার চাল তফাত । আর সকল রকম তফাতের চেয়ে এইটেই দুঃসহ। কী উপায় আছে। এর ? এক সময়ে হঠাৎ কী মনে পড়ল, কুমু চলল নীচের তলায় মোতির মার ঘরের দিকে । সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় দেখে শ্যামাসুন্দরী উপরে উঠে আসছে। “কী বউ, চলেছ কোথায় ? আমি যাচ্ছিলুম তোমার ঘরেই।” “কোনো কথা আছে ?” “এমন কিছু নয়। দেখলুম ঠাকুরপোর মেজাজ কিছু চড়া, ভাবলুম তোমাকে একবার জিজ্ঞাসা করে জানি, নতুন প্ৰণয়ে খটকা বাধল। কোনখানটাতে । মনে রেখে বউ, ওর সঙ্গে কী রকম করে বনিয়ে চলতে হয়, সে পরামর্শ আমরাই দিতে পারি। বকুলফুলের ঘরে চলেছ বুঝি ? তা যাও, মনটা খোলসা করে এসো গে৷ ” আজ হঠাৎ কুমুর মনে হল শ্যামাসুন্দরী আর মধুসূদন একই মাটিতে গড়া এক কুমােরের চাকে । কেন এ কথা মাথায় এল। বলা শক্ত। চরিত্র বিশ্লেষণ করে কিছু বুঝেছে তা নয়, আকারে-প্রকারে বিশেষ যে মিল তাও নয়, তবু দুজনের ভাবগতিকের একটা অনুপ্রাস আছে, যেন শ্যামাসুন্দরীর জগতে আর মধুসূদনের জগতে একই হাওয়া। শ্যামাসুন্দরী যখন বন্ধুত্ব করতে আসে তাও কুমুকে উলটাে দিকে ঠেলা দেয়, গা কেমন করে ওঠে। - মোতির মাের শোবার ঘরে ঢুকেই কুমু দেখলে নবীনে তাতে মিলে কী একটা নিয়ে হাত-কাড়াকড়ি চলছে। ফিরে যাবে যাবে মনে করছে, এমন সময় নবীন বলে উঠল, “বউদিদি, যেয়াে না যেয়ে না। “কিসের নালিশ ?” । । “একটু বোসো; দুঃখের কথা বলি।”