পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা (*)\S) অমিত ওআর্ডসওআর্থের কবিতা থেকে নজির পেড়ে বললে, প্রকৃতির সংসর্গে থাকতে থাকতে নির্বক নিশ্চেতন পদার্থের ছাপ লেগে যায় দেহে মনে প্রাণে, যাকে কবি বলেছেন “mute ( insensate things" শুনে সিসি ভাবলে, নির্বক নিশ্চেতন পদার্থকে নিয়ে আমাদের কোনো নালিশ নেই, যারা অত্যন্ত বেশি সচেতন আর যারা কথা কইবার মধুর। প্ৰগলভতায় সুপটু, তাদের নিয়েই আমাদের ভাবনা । ওরা আশা করেছিল, লাবণ্য সম্বন্ধে অমিত নিজেই কথা তুলবে। একদিন দুদিন তিনদিন যায়, সে একেবারে চুপ । কেবল একটা কথা আন্দাজে বোঝা গেল, অমিতর সাধের তরণী সম্প্রতি কিছু বেশিরকম ঢেউ খাচ্ছে। ওরা বিছানা থেকে উঠে তৈরি হবার আগেই অমিত কোথা থেকে ঘুরে আসে, তার পরে মুখ দেখে মনে হয়, ঝোড়ো হাওয়ায় যে কলাগাছের পাতাগুলো ফালি ফালি হয়ে বুলিছে তারই মতো শতদীর্ণ ভাবখানা । আরো ভাবনার কথাটা এই যে, রবি ঠাকুরের বই কেউ কেউ ওর বিছানায় দেখেছে। ভিতরে পাতায় লাবণ্যর নাম থেকে গোড়ার অক্ষরটা লাল কালি দিয়ে কাটা । বোধ হয় নামের পরশপাথরেই জিনিসটার দাম বাড়িয়েছে { অমিত ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে যায় । বলে, “খিদে সংগ্ৰহ করতে চলেছি।” খিদের জোগানটা কোথায়, আর খিদেটা খুবই যে প্রবল, তা অন্যদের অগোচর ছিল না । কিন্তু তারা এমনি অবুঝের মতো ভাব করত যেন হাওয়ায় ক্ষুধাকরতা ছাড়া শিলঙে আর-কিছু আছে। এ কথা কেউ ভাবতে পারে না । সিসি । মনে মনে হাসে, কেটি মনে মনে জ্বলে । নিজের সমস্যাটাই অমিতার কাছে এত একান্ত যে, বাইরের কোনো চাঞ্চল্য লক্ষ্য করার শক্তিই তার নেই। তাই সে নিঃসংকোচে সখীযুগলের কাছে বলে, “চলেছি এক জলপ্রপাতের সন্ধানে।” কিন্তু প্রপাতটা কোন শ্রেণীর, আর তার গতিটা কোন-অভিমুখী, তা নিয়ে অন্যদের মনে যে কিছু ধোকা আছে তা সে বুঝতেই পারে না। আজ বলে গেল, এক জায়গায় কমললেবুর মধুর সওদা করতে চলেছে। মেয়ে-দুটি নিতান্ত নিরীহভাবে সরল ভাষায় বললে, এই অপূর্ব মধু সম্বন্ধে তাদের দুৰ্দমনীয় কৌতুহল, তারাও সঙ্গে যেতে চায়। অমিত বললে, পথ দুৰ্গম, যানবাহনের আয়ত্তাতীত । বলেই আলোচনাটাকে প্ৰথম অংশে ছেদন করেই দৌড় দিলে । এই মধুকরের ডানার চাঞ্চল্য দেখে দুই বন্ধু স্থির করলে, আর দেরি নয়, আজই কমলালেবুর বাগানে অভিযান করা চাই। এ দিকে নরেন গেছে ঘোড়দৌড়ের মাঠে, সিসিকে নিয়ে যাবার জন্যে খুব আগ্ৰহ ছিল। সিসি গেল না। এই নিবৃত্তিতে তার কতখানি শমদমের দরকার হয়েছিল তা দরদী ছাড়া অন্যে কে বুঝবে । a दgांशउ5 দুই সখী যোগমায়ার বাগানে বাইরের দরজা পার হয়ে চাকরদের কাউকে দেখতে পেলে না। গাড়িবারাণ্ডায় এসে চোখে পড়ল, বাড়ির রোয়াকে একটি ছোটাে টেবিল পেতে একজন শিক্ষয়িত্রী ও ছাত্রীতে মিলে পড়া চলছে। বুঝতে বাকি রইল না, এরই মধ্যে বড়োটি লাবণ্য । । কেটি টক টক করে উপরে উঠে ইংরেজিতে বললে, “দুঃখিত।” লাবণ্য চৌকি ছেড়ে উঠে বললে, “কাকে চান। আপনারা ।” কেটি এক মুহুর্তে লাবণ্যর আপাদমস্তকে দৃষ্টিটাকে প্রখর বঁাটার মতো দ্রুত বুলিয়ে নিয়ে বললে, "মিস্টার অমিট্রায়ে এখানে এসেছেন কি না খবর নিতে এলুম।” লাবণ্য হঠাৎ বুঝতেই পারলে না, অমিট্রায়ে কোন জাতের জীব। বললে, “তঁাকে তো আমরা চিনি GN s” Վ. অমনি দুই সখীতে একটা বিদ্যুচ্চকিত চােখ ঠারাঠারি হয়ে গেল, মুখে পড়ল একটা আড়-হাসির রেখা । কেটি বাজিয়ে উঠে মাথা নাড়া দিয়ে বললে, “আমরা তো জানি, এ বাড়িতে তার যাওয়া-আসা