সার লেপেল গ্রিফিন কুকুর-সম্প্রদায়ের মধ্যে খেকি কুকুর বলিয়া একটা বিশেষ জাত আছে, তাহাদের খেই খেই আওয়াজের মধ্যে কোনোপ্রকার গাম্ভীৰ্য অথবা গৌরব নাই । কিন্তু সিংহের জাতে খেকি সিংহ কখনো শুনা যায় নাই। সার লেপেল গ্রিফিন জুন মাসের ফর্টনাইট্ৰলি রিভিয়ু পত্রে বাঙালিদের বিরুদ্ধে যে-একটা প্রবন্ধ লিখিয়াছেন তাহার মধ্যে ভারি-একটা খেই খেই আওয়াজ দিতেছে। ইহাতে লেখকের জাতি নিরূপণ কিন্তু লেখকের অভিপ্রায় যেমনি হউক, বাঙালিদের তঁহার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত । কারণ, উক্ত আওয়াজে আর কোনো ফল না হউক, আমাদিগকে সজাগ করিয়া রাখে। যে সময় একটুখানি নিদ্ৰাকর্ষণ হইয়া আসে ঠিক সেই সময়ে যদি এইরকম একটা করিয়া বিদেশী হঠাৎ আমাদের প্রতি খেকাইয়া আসে তাহাতে চট করিয়া আমাদের তন্দ্ৰা ভাঙিয়া যাইতে পারে। একটু যেন ঢুলুনি আসিয়াছিল- কনগ্রেসের মাথাটা তাহার স্কন্ধের উপর একটু যেন টলটল করিতেছিল, নানা কারণে তাহার স্নায়ু এবং পেশী যেন শিথিল হইতেছিল, এমন সময়ে কেবল বন্ধুর উৎসাহ পাওয়ার অপেক্ষা শত্রুপক্ষের নিকট হইতে দুই-একটা ধাক্কা খাইলে বেশি কাজ দেখে। এজন্য। গ্রিফিন-সাহেব ধন্য । তিনি আরো ধন্য যে, তিনি কোনো যুক্তি না দিয়া গালি দিয়াছেন। আমরা একটা জাতি নূতন শিক্ষা পাইয়া একটা নূতন উচ্চ আশার আকর্ষণে অগ্রসর হইতে চেষ্টা করিতেছি। অবশ্যই আমাদের নানাপ্রকার ত্রুটি অক্ষমতা এবং অপরিপক্কতা পদে পদে প্ৰকাশ পাইবার কথা এবং রাজনীতিবিশারদ ইংরাজের চক্ষে সেগুলি ধরা পড়িবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। কিন্তু সেই দুর্বল ভাগে আমাদিগকে আক্রমণ না করিয়া গ্রিফিন যখন কেবল গালিমন্দ দিয়াছেন তখন আমরা বেশ নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া থাকিতে @ifဒြာ၊ | গালি জিনিসটাও যে নিতান্ত সামান্য তাহা নহে, কিন্তু গালিবিশেষ আছে। গ্রিফিন আমাদিগকে বলিয়াছেন, তোমাদিগকে রাজনৈতিক অধিকার দেওয়াও যা আর বানরকে দেওয়াও তা । একজন স্কুলের ছাত্রও চেষ্টা করিলে ইহা অপেক্ষা সুনিপুণ গালি দিতে পারে। গ্রিফিন যে জন্তুটার উল্লেখ | করিয়াছেন সে বেচারার কিচিমিচিপূর্বক মুখবিকার করা ছাড়া আক্রোশ-প্রকাশের অন্য উপায় নাই— কিন্তু ভদ্রলোকের হাতে এতপ্রকার ভদ্রোচিত অস্ত্ৰ আছে যে, অশিষ্ট মুখভঙ্গিমা তাহার পক্ষে নিতান্তই অনাবশ্যক । গ্রিফিন যখন সেই অশিষ্টতা অবলম্বন করিয়াছেন তখন আমরা তাহা হইতে কেবল কৌতুক লাভ করিবার চেষ্টা করিয়া তাহার অনুকরণে ক্ষান্ত হইব । গালমন্দ বাদ দিয়া সমস্ত প্রবন্ধে গ্রিফিন-সাহেবের একমাত্র কথা এই যে, বাঙালি দুর্বল, অতএব রাজ্যতন্ত্রে বাঙালির কোনো স্থান থাকিতে পারে না । কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক বাঙালি জিলা-শাসনের ভার পাইয়াছে এবং অনেক বাঙালি মন্ত্রী-আসনও অধিকার করিয়াছে। যদি তাহদের কোনো অযোগ্যতা আবিষ্কৃত হইয়া থাকে। তবে প্রবন্ধে তাহার প্রমাণ দিলে তাহার যুক্তি পাকা হইত। ঘরে বসিয়া অনেক মূলতত্ত্ব গড়া যায়, কিন্তু সত্যের সঙ্গে যখন তাহার অনৈক্য হয় তখন স্বরচিত হইলেও তাহাকে বিসর্জন দেওয়া কর্তব্য । আমি একটা তত্ত্ব বাধিয়াছিলাম যে, ইংরাজ পুরুষের লেখায় যদি-বা কোনো কারণে উদারতার অভাব লক্ষিত হয় তথাপি তাহার মধ্যে একটা সংযত আত্মমর্যাদা থাকে ; কারণ, যে লোক সৌভাগ্যবান এবং ক্ষমতাবান তাহার লেখার মধ্যে একটি বিনয় এবং সেই বিনয়ের মধ্যেই একটি প্রবল পৌরুষ থাকে। আমাদের মতো যাহারা দুৰ্ভাগ্য, যাহাদের মুখ ছাড়া আর কিছু নাই, সময়ে সময়ে অক্ষম আক্ৰোশে তাহারা অমিতভাষী হইয়া আপনার নিরুপায় দীের্বল্যেরই পরিচয় দেয় । কিন্তু গ্রিফিনের লেখা ইংরাজি বড়ো কাগজে বাহির হইয়া থাকে, এবং সেইসঙ্গে আমার প্রিয়তত্ত্বটিকে বিসর্জন দিতে হয় । গ্রিফিন বাঙালিকে রাজনৈতিক অধিকার হইতে বঞ্চিত করিবার পূর্বে নিজেদের পার্লামেন্টে একটা
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/c/c2/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%AA%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page740-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%AA%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)