পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓwoo রবীন্দ্র-রচনাবলী সভ্যনীতি তাঁহাদের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযোগী নহে। ] এরূপ অবস্থায় আমাদের ন্যায়ান্যায়বোধ প্রবল হইয়া উঠিলে ইংরাজের রাজনীতি বিপথগামী হইতে পরিবে না । ইংরাজ যখন জানিবে সমস্ত ভারতবর্ষ তাহার কাজের বিচার করিতেছে তখন ভারতবর্ষকে সে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া কাজ করিতে পরিবে না। সম্প্রতি তাহার লক্ষণ কিছু কিছু দেখা যাইতেছে! ইংরাজের কোনাে অন্যায় দেখিলে ভারতবর্ষ আপন দুর্বল কণ্ঠে সভ্যতা ও নীতির দোহাই পাড়িতে থাকে । সেজন্য ইংরাজ রাগ করে বটে, কিন্তু তাহাকে কিঞ্চিৎ সতর্ক থাকিতেও হয় । তথাপি এখনো সম্পূর্ণ ফল ফলে নাই। আমাদের সম্বন্ধে সকল সময়ে সকল অবস্থায় নীতি মানিয়া চলাকে ইংরাজ দুর্বলতা-স্বীকার বলিয়া দেখে । আমাদের প্রতি অপরাধ করিয়া তাহাদের কেহ ন্যায়বিচারে দণ্ডনীয় হয়। ইহা তাহারা লজ্জাজনক ও ক্ষতিজনক বলিয়া জ্ঞান করেন । তাহারা মনে করেন, ভারতবষীয়ের নিকট ইহাতে ইংরাজের জোর কমিয়া যায় । রাজপুরুষদিগের মনের ভাব ঠিক করিয়া নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে অসাধ্য, কিন্তু বোধ করি রাউীচি-সাহেবের অসময়ে পদোন্নতি উপরি-উক্ত পলিসিবশত । বিশেষত যখন দেখা যায় এমন ঘটনা রংবার ঘটিয়াছে তখন সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়। গবর্মেন্ট যেন নীরবে বলিতেছেন যে, তোমাদিগের কাহাকেও অন্যায় উৎপীড়ন ও অপমান করিয়া কোনো কর্তৃপুরুষের লাঞ্ছনা হইতে পারে। ইহা মনে করাই তোমাদের পক্ষে স্পর্ধা, সেই স্পর্ধায় পদাঘাত করিবার জন্য যদি-বা প্রথা উল্লঙঘন, যদি-বা রাজশাসনের অনাদর করিতে হয় তবে তাহাও শ্রেয় । ইংরাজ ন্যায়পরতার অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, ধর্মবিচারেরও অতীত । সত্যের অনুরোধে স্বীকার করিতে হইবে যে, সম্প্রতি দুই-একটি ঘটনায় দেখা গিয়াছে, গবমেন্ট কেবল ইংরাজী নহে, নিজের কর্মচারীমাত্রকেই ন্যায়বিচারের কিঞ্চিৎ উধের্ক তুলিয়া রাখিতে চাহেন । বালাধন-হত্যাকাণ্ডের মকদ্দমায় ইংরাজ জজ হইতে বাঙালি পুলিস কর্মচারী পর্যন্ত যে-কেহ লিপ্ত ছিল, হাইকেটের বিচারে যাহারা প্রত্যেকে প্রকাশ্যে নিন্দিত হইয়াছে, তাহারা সকলেই বাংলা-গবমেন্ট-কর্তৃক পুরস্কৃত এবং উৎসাহিত হইয়াছে। আমরা বাহিরের লোক, রাজনীতির ভিতরকার কথা কিছুই জানি না। হয়তো ইহার মধ্যে কোনো গোপন কারণ থাকিতে পারে । হয়তো কর্তার, এমন ধারণা হইতে পারে যে, বালাধনের মকদ্দমায় স্থানীয় জজের বিচার অন্যায় হয় নাই- যেমন করিয়া হউক, গোটা পাঁচ-সাত লোকের ফাসি যাওয়া উচিত ছিল। তাঁহাদের এমন সংস্কার হইতে পারে যে, আদালতে টিকিবার যোগ্য প্রমাণ না থাকিলেও ২ ঘটনাটা প্রকৃতপক্ষে সত্য এবং সে সত্য স্থানীয় বিচারকই কেবল নির্ণয় করিতে পারে, হাইকোর্টের জজের পক্ষে অসাধ্য । আমাদের বক্তব্য এই যে, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে প্রকাশ্যে যাহাদের ব্যবহার নিন্দিত হইয়াছে। সাধারণের নিকটে যাহারা অন্যায়কারী বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, শাস্তি দেওয়া দূরে থাক তাহাদিগকে প্রকাশ্যে পুরস্কৃত করিলে জনসাধারণের ন্যায়ান্যায়জ্ঞানের প্রতি একান্ত অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয় । সকলকে বলা হয়, তোমাদের কাছে কর্তব্য-অকর্তব্য সম্বন্ধে কোনোরূপ কৈফিয়ত দিবার কোনো আবশ্যক দেখি না ; তোমরা ভালোই বল মন্দই বল তাঁহাতে গবর্মেন্টের কোনো মাথাব্যথা নাইআমাদের ভারি স্ট্রং গবর্মেন্ট । ": যে গবর্নর প্রজার মর্মবেদনার উপর, প্রজার ন্যায়ান্যায়বোধের উপর জুতার গোড়ালি ফেলিয়া ফেলিয়া চলেন এবং সেই মাচু মচু-শব্দে দুর্বল কণ্ঠের আর্তস্বর নিমগ্ন করিয়া দেন, তিনি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ায় স্ট্রং গবর্নর । কিন্তু তাহাতে তঁহাদের বল প্রকাশ পায়, না, আমাদের যৎপরোনাস্তি দুর্বলতার সূচনা করে, তাহা কাহাকেও বলিয়া দেওয়া আবশ্যক করে না । গবর্মেন্টের এরূপ উদ্ধত অবজ্ঞায় ইহাই প্ৰকাশ পায় যে, তাহাদের মতে ভারতবষীয় জনসাধারণের ন্যায়ান্যায়বোধ এমন প্রবল নহে যে, তাহার নিকট সংকোচ