পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

° ? ○ অভিজাতবর্গের মতো আমরা রক্ষণশীল ; কিন্তু মাতৃভাষাকেও তাহারা রক্ষা করেন না। দেশের জনসাধারণের ন্যায় দেশের ভাষাও তাঁহাদের নিকট কৃতজ্ঞ নহে। তাহার কারণ পূর্বেই বলিয়াছি- এমন কিছুতে র্তাহাদের উৎসাহ নাই। রাজার নিকট যাহার কোনোপ্রকার আদর না থাকে, যাহা কেবলমাত্র দেশের । দেশীয় রুচি এবং শিল্প এখনো কিয়ৎপরিমাণে র্তাহাদের আদর পায়, কিন্তু তাহাও ক্রমশ হ্রাস হইয়া আসিতেছে। বিলাতি রুচির সঙ্গে সঙ্গে বিলাতি পণ্য তঁহাদের গৃহ হইতে দেশের শিল্পকে অবমাননা-সহকারে নির্বাসিত করিয়া দিতেছে। সংক্ষেপত, এ দেশে পূর্বকালে জমিদার-সম্প্রদায়ের যে গীেরব ছিল তাহা খেতাব-অবলম্বনে ছিল - তাহা দান, অৰ্চনা, কীর্তিস্থাপন, আর্তগণের আর্তিচ্ছেদ, দেশের শিল্পসাহিত্যের পালন-পোষণের উপর নির্ভর করিত । সেই মহৎ গৌরব এখনকার জমিদাররা প্ৰতিদিন হারাইতেছেন । দেশ যখন চাহিতেছে। রুটি তাহারা দিতেছেন প্রস্তর ; বঙ্গভূমি তাহার জলকষ্ট, তাহার অন্নকষ্ট তাহার শিল্পনাশ, তাহার বিদ্যাদৈন্য, তাহার রোগতাপ লইয়া তঁহাদের মুখের দিকে চাহিয়া আছে, আর র্তাহারা স্বদেশপ্রত্যাগত সাহেব-রাজকর্মচারীদের পাষাণ-প্রতিমূর্তি গড়িয়া দিতেছেন। সাহেবের জন্য তাহারা অনেক করেন, কিন্তু সাহেবের চেষ্টা করিলেও তাহাদিগকে দেশীয় সাধারণের স্বাভাবিক অধিনেতা করিতে পরিবেন না । কারণ, ইংরাজ-রাজা অস্বাভাবিককে স্বাভাবিক করিয়া তুলিতে পারেন না। যদি তাহারা আপন পুরাতন উচ্চ স্থান অধিকার করিতে চাহেন, তবে গবর্মেন্ট-প্রাসাদের গম্বুজটার দিকে অহরহ উর্ধ্বমুখে না তাকাইয়া নিম্নে একবার দেশের দিকে, সাধারণের দিকে মুখ ফিরাইতে হইবে । - 臀 \90 (? অপরপক্ষের কথা ভাদ্রমাসের ভারতীতে "মুখুজে বনাম বাড়ুজে প্রবন্ধের লেখক বাড়ুজ্জেমশায়দের হইয়া যে ওকালতি করিয়াছেন তাহা পক্ষপাতবিহীন নহে। ইংরাজ-প্ৰসাদ-বুভুক্ষু উপাধিভিক্ষুকদের পক্ষে আমি কোনো কথা বলিতে চাহি না, কিন্তু লেখক অন্যপক্ষীয়দের প্রতি যে-সমস্ত গুণের আরোপ করিয়াছেন তাহার কোনো প্ৰমাণ দেন নাই । এ কথা সত্য হইতে পারে এখনকার জমিদারবর্গ রাজপুরুষদের অত্যন্ত ন্যাওটাে হইয়া পড়িয়াছেন, দেশের লোকের দিকে তাহারা তাকান না। স্বদেশীয়দের নিকট হইতে খ্যাতিলাভের জন্য এবং স্বদেশের প্রতি স্বাভাবিক বিদ্যান্যতা-বশত পুরাকালের জমিদারগণ যে-সকল কীর্তিকলাপ স্থাপন করিতেন, এখনকার জমিদারগণ তাহাতে উৎসাহ বোধ করেন না । কেন করেন না। পূর্বোক্ত প্রবন্ধে তাহার কতকটা হেতু দেওয়া হইয়াছে। ইংরাজের প্রভাব আমাদের দেশে এত অধিক প্রবল হইয়াছে যে, তাহা সকল প্রভাবকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। দেশের লোককে আমরা গণ্য জ্ঞান করি না । দেশের লোকের কাছে প্ৰশংসা পাওয়ার কোনো স্বাদ নাই । মুসলমানদের আমলে আমরা স্বদেশকে তুচ্ছ বোধ করিতাম না। কারণ, বিজেতারা আমাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইলেও আমাদেরও নানা বিষয়ে শ্রেষ্ঠতা ছিল । অন্তত আমাদের উভয়ের মধ্যে গুরুতর °ार्थका छिठन का । কিন্তু ইংরাজ-রাজার সঙ্গে আমাদের প্রভেদ সর্ব বিষয়ে এত অত্যধিক, তাহাদের বুদ্ধিবল যন্ত্রতন্ত্র বিলাসবিভূতি সর্বদাই আমাদের পক্ষে এত দুরায়ত্ত বলিয়া বোধ হয় যে, অলক্ষিতভাবে আপনাদের প্ৰতি আমাদের শ্রদ্ধা হ্রাস হইয়া আসিয়াছে । যে অনিবাৰ্য শ্রদ্ধার অভাবে ইংরাজ অনেক সময় আমাদের প্রতি সদবিচার করিতে পারে না সেই