পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳÑծԵր রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রচলিত ছিল। একটা কাককে ঢেলা মারিলে পৃথিবীসুদ্ধ কাক যেমন চীৎকার করিয়া মরে, দেশী লোকের মারা খাইবার খবরে আমাদের খবরের কাগজগুলি তেমনি করিয়া অবিশ্রাম বিলাপপরিতাপে আকাশ বিদীর্ণ করিত । আমরাই সর্বপ্রথমে “সাধনা’ পত্রিকায় এই নাকিকান্নার বিরুদ্ধে বারংবার আপত্তি উত্থাপন করিয়াছি- এবং কথঞ্চিৎ ফললাভ করিয়াছি তাহাও দেখা যাইতেছে । আজ হঠাৎ আত্মপ্ৰতিবাদের যে কোনো কারণ ঘটিয়াছে তাহা বোধ হয় না । ছবিতে যেমন চৌকা জিনিসের চারিটিা পােশই একসঙ্গে দেখানো যায় না, তেমনি প্ৰবন্ধেও একসঙ্গে একটা বিষয়ের একটি, বড়োজের দুইটি দিক দেখানো চলে। “রাজকুটুম্বা’ প্ৰবন্ধেও আমাদের বক্তব্যবিষয় খুব ফলাও নহে। নিয়ু ইন্ডিয়ার সম্পাদকমহাশয় যখন ভুল বুঝিয়াছেন, তখন সম্ভবত মুর রচনায় কোনো ত্রুটি থাকিতে পারে । এবারে ছোটো করিয়া এবং স্পষ্ট করিয়া বলিবার চেষ্ট ভারতবর্ষে যে মারে এবং যে মার খায়, এই দুই পক্ষের অবস্থা লইয়া আমরা কিঞ্চিৎ তত্ত্বালোচনা করিয়াছিলাম মাত্র । আমরা কোনো পক্ষকেই কর্তব্যসম্বন্ধে কোনো উপদেশ দিই নাই । যে লোক জলে পড়িয়ছে, ডাঙা হইতে তাহাকে ঢ়িল ষ্টুড়িয়া মারা সহজ । অপরপক্ষের সে মার ফিরাইয়া দেওয়া শক্ত। এরূপ স্থলে কোন পক্ষকে কাপুরুষ বলিব ? যে মারে, না, যে মার ফিরাইয়া 6ाश क्रा ? ইংরাজের পক্ষে ভারতবর্ষীয়কে মারা নিতান্ত সহজ- কেবল তাহার গায়ে জোর আছে বলিয়া যে, তাহা নহে। সেও একটা কারণ বটে, কিন্তু সে কারণকে উপেক্ষা করা যাইতে পারে । তাহার বাহুবল বেশি, কিন্তু তাহার পশ্চাতের বল আরো অনেক বেশি। তাহার দৃশ্যশক্তির সঙ্গে লড়াই চলে, কিন্তু তাহার অদৃশ্যশক্তি অত্যন্ত প্রবল। আমি যেমন একটি মানুষ, সেও যদি তেমনি একটি মানুষমাত্র হইত। তবে আমরা কতকটা সমকক্ষ হইতাম | কিন্তু এ স্থলে আমি একটি ব্যক্তিমাত্র, আর সে ইংরাজ, সে রাজশক্তি । বিচারকালে, মানুষ বলিয়া আমার বিচার হইবে, আর তাহার বিচার হইবে ইংরাজ বলিয়া । আর, আমি যখন ইংরাজকে মারি, তখন বিচারক সেটাকে এই বলিয়া দেখে যে, ভারতবর্ষের রাজশক্তিকে আমি আঘাত করিলাম, ইংরাজের প্রেস্টিজকে আমি ক্ষুন্ন করিলাম। অতএব সামান্য আঘাতকারী বলিয়া আমার বিচার হয় না । আমাদের মধ্যে এই গুরুতর অসমকক্ষতা আছে বলিয়াই যে মার খায়, তাহার চেয়ে যে মারে । সেই কাপুরুষ বেশি। এই কাপুরুষতার জন্য ইংরাজ আঘাতকারী বিচারে নিস্কৃতি পাইয়াও যদি স্বজাতির কাছে ধিক্কারলাভ করিত, তাহা হইলে তাহাতেও আমরা একটু বল পাইতাম । কিন্তু দেখিতে পাই, উলটা তাহারা বেশি করিয়া সোহাগ পাইয়া থাকে । তাহাদের জন্য চাদ ওঠে, স্বজাতীয় কাগজে আহা-উহুর অন্ত থাকে না । অ্যাংলো-ইন্ডিয়ায় এইরূপ কাপুরুষতার জন্য কেবল প্রকাশ্যে ভিক্টোরিয়া-ক্রিস দেওয়া হয় না, এই পর্যন্ত ! সম্প্রতি একজন দেশী লোককে খুন করিয়া মাটিন বলিয়া একজন ইংরাজের দ্বিতীয়বার বিচারে তিন বৎসর জেল হইয়াছে। ইহার পর হইতে ইংলিশম্যান প্রভৃতি কাগজে কিরূপ আতঙ্কের আর্তনাদ উঠিয়াছে, তাহার নিম্নলিখিত নমুনাটি কৌতুকজনক— There are some things that foreign Governments, and even Native States in India, manage better than we do; one of these is the protection of their own kith and kin, and the maintenance of that prestige so necessary for upholding constituted authority. To the disinterested observer in India, it seems that the white man is becoming very much discounted under the aegis of the British Raj'. Time was when the Britisher, as conqueror and ruler of this land,