পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵr8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এবং অসুবিধা উপস্থিত হইলেও তাঁহাকে বুক দিয়া ঠেকাইতে পারিব । এইজন্য অদ্যকার অত্যন্ত উত্তেজনার দিনেও আমাকে এ কথা বলিতে হইতেছে যে, স্পর্ধা করিবার, লড়াই করিবার দিন আজ আমাদের নহে। স্পর্ধা করাটা শক্তিমানের পক্ষে একটা বিলাসের স্বরূপ হইতে পারে, কিন্তু অশক্তের পক্ষে তাহা দেউলে হইবার পন্থা । যে শক্তি তাহাতে অপব্যয় হয় তাহা খরচ করিবার সম্বল আমাদের আছে কি । শুধু তাই নয়, যে হিসাবের উপর নির্ভর করিয়া আমরা এতটা আস্ফালন করিতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছি, সে হিসাবটা কি ভালোরূপ পরীক্ষা করিয়া দেখা হইয়াছে। যে নীেকায় কোনোমতে ভর সয় মাত্র সে নীেকায় নৃত্য করিতে শুরু করিলে যদি তাহার ফাটগুলা দিয়া জল উঠিতে থাকে। তবে সেটাকে আমরা এমন অভাবনীয় বলিয়া মনে করি কেন । এই নৃত্যব্যাপারে আমি আপত্তি করিতে চাই না। কিন্তু ইহাই যদি আমাদের অভিপ্রায় থাকে। তবে একটু সবুর করিয়া অন্তত ঐ ফাঁটাগুলা সারাইয়া লইতে হইবে তো ?-- তাহাতে বিলম্ব হইবে । তা হইবে বটে, কিন্তু জগতের মধ্যে আমরা এমন পুণ্য করি নাই যে, ভাঙা আসবাব লইয়া কাজও করিব, দুর্লভ ধন লাভও করিব, , ऊशष् दिव्लशG घदि भी । তবে করিতে হইবে কী। আর-কিছু নয়, স্বদেশ সম্বন্ধে স্বদেশীর যে দায়িত্ব আছে সর্বসাধারণের কাছে স্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করিয়া তুলিতে হইবে । পুরাতন দলই হউন, আর নূতন দলই হউন, যিনি পারেন। একটা কাজের আয়োজন করুন | প্ৰমাণ করুন যে, দেশের ভার তাহারা লইতে পারেন । তঁহাদের মত কী সে তো বারংবার শুনিয়াছি, তাহাদের কাজ কী কেবল সেইটেই দেখা হইল না । দেশের সমস্ত সামর্থ্যকে একত্রে টানিয়া যদি তাহাকে একটা কলেবর দান করিতে না পারি, যদি সেইখান হইতে স্বচেষ্টায় দেশের অন্ন বস্ত্ৰ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার একটা সুবিহিত ব্যবস্থা করিয়া তোলা আমাদের সকল দলের পক্ষেই অসম্ভব হয়, যদি আমাদের কোনোপ্রকার কর্মনীতি ও কর্মসংকল্প না থাকে, তবে আজিকার এই আস্ফালন কাল আমাদিগকে নিস্ফল অবসাদের মধ্যে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিবে । যদি সকলে মিলিয়া একটা কাজের আয়োজন গড়িয়া তুলিবার শক্তি আজও আমাদের না হইয়া থাকে। তবে অগত্যা আমাদিগকে নিভৃতে নিঃশব্দে ব্যক্তিগত চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে । কিন্তু যদি আমরা অসময়ে ঔদ্ধত্য করিতে থাকি সেই বিচ্ছিন্ন চেষ্টার ক্ষেত্ৰ একেবারে নষ্ট হয় । গর্ভিণীকে সমস্ত মুক্ত হইতে নিজেকে ধাইয়া সাবধানে চলতে হয়— সেই সতর্কতা উক্ততা নািহ তায় তাহার আজও আমাদের দেশ সম্মিলিত কর্মচেষ্টায় আসিয়া পৌঁছিতে পারে নাই, একক চেষ্টার যুগে আছে, এ কথা যখন তাহার ব্যবহারে বুঝা যাইতেছে তখন দেশের যে-সকল যুবক উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছেন তঁহাদের প্রতি একটিমাত্র পরামর্শ এই আছে, সমস্ত উত্তেজনাকে নিজের অস্থিমজ্জার মধ্যে নিস্তব্ধভাবে আবদ্ধ করিয়া ফেলো, স্থির হও, কোনো কথা বলিয়ে না, অহরহ অন্তৰ্ভুক্তিপ্রয়োগের দ্বারা নিজের চরিত্রকে দুর্বল করিয়াে না। আর-কিছু না পারো খবরের কাগজের সঙ্গে নিজের সমস্ত সম্পর্ক ঘুচাইয়া যে-কোনো একটি পল্লীর মাঝখানে বসিয়া যাহাকে কেহ কোনোদিন ডাকিয়া কথা কহে নাই তাহাকে জ্ঞান দাও, আনন্দ দাও, আশা দাও, তাহার সেবা করো, তাহাকে জানিতে দাও মানুষ বলিয়া তাহার মাহাত্ম্য আছে, সে জগৎসংসারের অবজ্ঞার অধিকারী নহে। অজ্ঞান তাহাকে নিজের ছায়ার কাছেও ত্ৰস্ত করিয়া রাখিয়াছে ; সেইসকল ভয়ের বন্ধন ছিন্ন করিয়া তাহার বক্ষপট প্রশস্ত করিয়া দাও । তাহাকে অন্যায় হইতে, অনশন হইতে, অন্ধসংস্কার হইতে রক্ষা করো। নূতন বা পুরাতন কোনো দলেই তোমার নাম না জানুক, যাহাদের হিতের জন্য আত্মসমর্পণ করিয়াছ প্রতিদিন তাহাদের প্রতি অবজ্ঞা ও অবিশ্বাস ঠেলিয়া এক-পা এক-পা করিয়া সফলতার দিকে অগ্রসর হইতে থাকে । মিথ্যা আত্মপ্রকাশে আমরা যে শক্তি কেবলই নষ্ট করিতেছি, সত্য আত্মপ্রয়োগে তাহাকে খাটাইতে হইবে । ইহাতে লোকে যদি আমাদিগকে সামান্য বলিয়া, ছােটাে বলিয়া অপবাদ দেয়, উপহাস করে, তবে তাহা অম্লানবদনে স্বীকার করিয়া লইবার বল যেন আমাদের থাকে। আমরা যে সামান্য কেহ নহি, আমরা