পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইদুরের ভোজ ছেলেরা বললে, ভারি অন্যায়, আমরা নতুন পণ্ডিতের কাছে কিছুতেই পড়ব না। নতুন পণ্ডিতমশায় যিনি আসছেন তীর নাম কালীকুমার তর্কলংকার। ছুটির পরে ছেলেরা রেলগাড়িতে যে যার বাড়ি থেকে ফিরে আসছে ইস্কুলে। ওদের মধ্যে একজন রসিক ছেলে কালো কুমড়োর বলিদান বলে একটা ছড়া বানিয়েছে, সেইটে সকলে মিলে চীৎকার শব্দে আওড়াচ্ছে। এমন সময় আড়খোলা ইস্টেশন থেকে গাড়িতে উঠলেন একজন বুড়ো ভদ্রলোক। সঙ্গে আছে তীর কঁথায় মোড়া বিছানা। ন্যাকড়া দিয়ে মুখ বন্ধ করা দু-তিনটে হাঁড়ি, একটা টিনের ট্রাঙ্ক, আর কিছু পুঁটুলি। একটা ষণ্ডা-গোছের ছেলে, তাকে ডাকে সবাই বিচকুন বলে, সে চেচিয়ে উঠল— এখানে জায়গা হবে না বুড়ঢ়া, যাও দূসরা গাড়িতে। বুড়ো বললেন, বড়ো ভিড়, কোথাও জায়গা নেই, আমি এই কোণটুকুতে থাকিব, তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। ব’লে ওদের বেঞ্চি ছেড়ে দিয়ে নিজে এক কোণে মেঝের উপর বিছানা পেতে বসলেন। বিচকুন বলে উঠল, শ্ৰাদ্ধ করতে। বুড়ো জিজ্ঞাসা করলেন, কার শ্ৰাদ্ধ? উত্তরে শুনলেন, কালো কুমড়ো টাটকা লঙ্কার। ছেলেগুলো সব সুর করে চেচিয়ে উঠল— দেখিয়ে দেব লবোড়ঙ্কা। আসানসোলে গাড়ি এসে থামল, বুড়ো মানুষটি নেবে গেলেন, সেখানে স্নান করে নেবেন। স্নান সেরে গাড়িতে ফিরতেই বিচকুন বললে, এ গাড়িতে থাকবেন না মশায়। • १ळी (ऊ । ইদুরের ? সে কী কথা। দেখুন-না আপনার ঐ হাঁড়ির মধ্যে ঢুকে কী কাণ্ড করেছিল। ভদ্রলোক দেখলেন তীর যে হাঁড়িতে কদমা ছিল সে হাঁড়ি ফাকা। আর যেটাতে ছিল খইচুর তার একটা দানাও বাকি নেই। বিচকুন বললে, আর আপনার ন্যাকড়াতে কী একটা বঁধা ছিল সেটা সুদ্ধ নিয়ে দৌড় দিয়েছে। সেটাতে ছিল ওঁর বাগানের গুটি-পাঁচেক পাকা আম। ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন, আহা, ইদুরের অত্যন্ত ক্ষিদে পেয়েছে দেখছি। বিচকুন বললে, না না, ও জাতটাই ওরকম, ক্ষিদে না পেলেও খায়। ছেলেগুলো চীৎকার করে হেসে উঠল, বললে, হাঁ মশায়, আরো থাকলে আরো খেত। ভদ্রলোক বললেন, ভুল হয়েছে, গাড়িতে এত ইদুর একসঙ্গে যাবে জানলে আরো কিছু আনতুম।