পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা (ነቕይS তুলেছে, আমনি সে সৃষ্টির জন্য উদগ্ৰীব হয়েছে। সাহিত্য তার প্রমাণ। আজকের দিনের বাঙালিযে বাঙালি একদিন এই কীর্তনের মধ্যে, লোকসংগীতের মধ্যে বিশেষত্ব প্রকাশ করেছে- সে কি আজ নূতন কিছু দেবে না? সে কি কেবলই পুনরাবৃত্তি করবে? ক্লাসিক্যাল আমাদের কাছে দাবি করে নিখুঁত পুনরাবৃত্তি। তানসেন কী গেয়েছেন জানি না, আমরা তো তানসেনের সময়ের লোক নই, আমরা কি জড়পদাৰ্থ? আমাদের কি কিছুমাত্র নূতনত্ব থাকবে না? কেবল পুনরাবৃত্তিই করব? আমার দেশবাসীর কাছে আমার নিবেদন এই যে, পুনরাবৃত্তির পথ চলা আমাদের অভ্যাস নয়। নূতনের পথে ভুল করে যাওয়াও ভালো।— তাতে...পরিপূর্ণতা আনে। আমি স্বীকার করব ক্লাসিক্যাল সংগীতের সৌন্দর্যের সীমা নেই, যেমন অজস্তার মতো কারুকার্য। আর কোথাও হয় কি না সন্দেহ। কিন্তু, ছোটো ছেলের মতো তার উপর দােগা বুলিয়ে বুলিয়ে পুন: {ারায়] চিত্রিত করা, সেই কি আমাদের ধর্ম? সেই কি আমাদের আদর্শ? যে পূর্ণতা পূবর্তন রূপে] আপনাকে প্রকাশ করেছে সেই পূর্ণতাকে উত্তীর্ণ হয়ে আপনাকে যদি প্রকাশ করতে না পারি, তা হলে ব্যর্থ হল আমাদের শিক্ষা। বড়ো বড়ো লোক...শিক্ষা দিয়েছেন‘তোমরা অনুপ্রেরণা লাভ করে- সেই অনুপ্রেরণাকে তোমাদের শক্তিতে প্রকাশ করো।” তানসেন অনুকরণের কথা বলেন নি এবং কোনো গুণীই তা বলেন নি, বলতে পারেন না। আজকের দিনে যুরোপ অদ্ভুত দুঃসাহসের সঙ্গে নূতন নুতন পথে আপনাকে উন্মুক্ত করতে চলেছে। অন্তরের মধ্যে তাদের কী সে ব্যাকুলতা! তাদের সে প্রকাশ রূঢ় হতে পারে, কুশ্রী হতে পারে, কিন্তু তা যুগের প্রকাশ- তা প্লাবনের প্রকাশ। আমাদেরও তাই দরকার। যদি দেখি হল না, তা হলে বুঝব প্ৰাণ জাগে নি। আজ পর্যন্ত আমরা [স্বকীয় ?] ভাষায় স্বকীয় ভাবে ভাবতে পারি নি। ধিক আমাদের। তাদের প্রদর্শিত পথে চললে আমরা মোক্ষলাভ করব? না-কখনোই না। এই-যে গতানুগতিকতা এটা সম্পূর্ণ অশ্রদ্ধয়। সকল রকম প্রকাশের মধ্যে যুগের প্রকাশ, আত্মপ্রকাশ, হওয়া চাই। কত রকম যুগের বাণী, কত দুঃখ, কত আঘাত আমাদের উপর পড়েছে। তার কিছু কি আমরা রেখে যাব না? একশো বছর পরে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশকে আমাদের নব জাগরণের চিত্র কী দেখােব? তাদের কি আমরা এক হাজার বছরের পুরাতন জিনিস দেখাব ? ইংরাজের নিজের প্রকৃতিগত রাষ্ট্রনীতিকে দূর দেশ থেকে নিয়ে এসে রোপণ করাব, আর এই কথাই ভবিষ্যৎকে জনাব ? আজি চাই নূতনের সন্ধান। তাঁর গান, তার রূপ, তার কাব্য, তার ছন্দ আমাদের মধ্য দিয়ে উদবুদ্ধ হবে। এই যদি হয় তবে বাঙালি হবে ধন্য। নকলে চলবে না। আমাদের সংগীত, চিত্ৰকলা, রাষ্ট্রনীতি, আমাদের আপনি হোক এই আমার বলার কথা। আমি বলব আমি কাউকে জানি না, কাউকে মানি না-আমরা যা-কিছু [সৃষ্টি] করি।-না কেন, তার মধ্যে ভারতীয় ধারা। আপনি [থেকে] যাবে। আমাদের...সেই ভারতীয় প্রকৃতি তেমনি আছে যেমন পূর্বতন কালে কীর্তনগানে বাউলে ছিল। সেই রকম আজ যদি বাঙালি আপনাকে সংগীতে চিত্রকলায় প্রকাশ করতে ইচ্ছা করে তবে সেই প্রকৃতিকে লঙ্ঘন করতে পারবে না, যদি একমাত্র লক্ষ্য থাকে। যা-কিছু করবে নিজেকে মুক্ত করে-নকল করে নয়। SS City S8y