পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৪ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বুঢ়া আরম্ভ হল। এতকাল ইংরজি ভাষা নির্মিত হইতেছিল, এতক্ষণে তাহ একপ্রকার সমাপ্ত সাহিত্যাপ্রিয় ব্যক্তিরা সেমি-স্যাক্সন সাহিত্য চর্চা করিয়া বড়ো আমােদ পাইবেন না। অনুবাদ অনুকরণ ভাবহীন কথার স্রোতেই এই সাহিত্যক্ষেত্র পূর্ণ। তবে ভাষা-তত্ত্ব-প্রিয় ব্যক্তি ইহা চৰ্চা করিলে তঁহাদের পরিশ্রমের অনেক পুরস্কার পাইবেন। সেমি-স্যাক্সন সাহিত্য প্রকৃতপক্ষে একটা বিশেষ সাহিত্য নহে, তাহা ইংরাজি সাহিত্যের সূত্রপাত মাত্র। তখন ব্যাকরণ বানান ও ভাষার কিছুই স্থিরতা ছিল না, একটি পুস্তকেই এক কথার নানা প্রকার বানান আছে, তাহাতে বুঝিবার বড়ো গোল পড়ে। একটা স্থির আদর্শ না থাকতে সকলেই নিজের ব্যাকরণে, নিজের বানানে, নিজের ভাষায় পুস্তক লিখিত। নর্মান ও স্যাক্সন জাতিদ্বয়ের অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তখনকার ভাষা ও সাহিত্য কেমন পরিবর্তিত হইতে লাগিল। অবশেষে কত প্রকার ঘাত-সংঘাতে ইংরাজি সাহিত্য ও ভাষা নির্মিত হইল।। ১০৬৬ খৃস্টাব্দে নর্ম্যানেরা ইংলন্ডে প্রবেশ করে, তখন হইতে যদি ইংরাজি সাহিত্যের নির্মাণ-কালের আরম্ভ ধরা যায় ও ১৩৪৫ খৃস্টাব্দে চসার জন্মগ্রহণ করেন, তখন যদি তাহার শেষ ধরা যায়। তবে ইংরাজি সাহিত্য ও ভাষা নির্মিত হইতে প্ৰায় তিন শত বৎসর লাগিয়াছে বলিতে হইবে। उठाक्षऊँी छाछे S २५७ And we at sober eve would round thee throng, Hanging, enraptured, on thy stately Song; And greet with smiles the young-eyed Poesy, All deftly mashed, as near Antiquity.' --Coleridge কবি যখন আপনার গুণ বুঝিতে পারিতেছেন ও জগৎ যখন তাহার গুণের সমাদর করিতেছে না, তখন তাহার কী কষ্ট। যখন তিনি মনে করিতেছেন। পৃথিবীর নিকট হইতে যশ ও আদর তাহার প্ৰাপ্য, তাহার ন্যায্য অধিকার, তখন তিনি যদি ক্ৰমাগত উপেক্ষা সহ্য করিতে থাকেন, তাহা হইলে তাহার প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি প্ৰজ্বলিত হইয়া উঠে, কিন্তু কী উপায়ে সে প্রতিহিংসা সাধন করেন? আপনাকে বিনাশ করিয়া। তিনি বলেন, পৃথিবী যখন তাহাকে অনাদর করিল, তখন পৃথিবী তীহাকে পাইবার যোগ্য নহে, তিনি আপনাকে বিনষ্ট করেন ও মনে করেন। পৃথিবী একদিন ইহার জন্য অনুতাপ করিবে। বালক কবি চ্যাটার্টন যখন যশ ও অর্থের নিমিত্ত লালায়িত হইয়া লন্ডনে গেলেন ও যখন নিরাশ হইয়া অনাহারে দিন যাপন করিতেছিলেন, তখন একজন তীহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল যে, তিনি কেন তাহার লেখা ছাপাইয়া অর্থ উপার্জন করেন না, তখন কবি কহিলেন, পুরানাে বস্ত্ৰ কিনিবার জন্য ও গৃহ সাজাইবার জন্য তিনি কোনাে কবিতা লেখেন নাই; পৃথিবী যদি ভালোরােপ ব্যবহার না করে তাহা হইলে সে পৃথিবী তাঁহার কবিতার একটি ছত্রও দেখিতে পাইবে না! আরও কিছুদিন অপেক্ষা করিলেন, দেখিলেন পৃথিবী ভালো ব্যবহার করিল না, তখন তিনি তাহার সমস্ত অপ্রকাশিত কবিতা দগ্ধ করিয়া ফেলিলেন ও আপনার প্রাণও নষ্ট করিয়া ফেলিলেন; পৃথিবী আজ অনুতাপ করিতেছে। ১৭৭০ খৃস্টাব্দে যে পৃথিবী তাহার মৃত্যুর পর একটি অশ্রুজােলও ফেলে নাই; ১৮৪০ খৃস্টাব্দে সেই পৃথিবী তঁহার স্মরণার্থে প্রস্তরস্তম্ভ নির্ম করিয়া পূর্বকৃত অন্যায় ব্যবহারের যথাসাধ্য প্রতিকার করিবার চেষ্টা পাইল। "