পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৪ । ख़दीम-शष्मावर्दी বাংলা সাহিত্যের প্রতি অবজ্ঞা [ শেষাংশ ] যাহা অসম্ভব তাহা প্রত্যাশা করা অজ্ঞতার লক্ষণ। বহু যুগের চিস্তান্তরের উপর ইংরাজি সাহিত্য নির্মিত, বঙ্গসাহিত্য যতই শিরা উত্তোলন করুক একেবারেই তাহার সমকক্ষ হইতে পরিবে না। অতএব তুলনা করিবার সময় ইংরাজি সাহিত্য হইতে তাহার সেই উচ্চ সুবিধাটুকু হরণ করিয়া লইয়া দেখিতে হয়। আমরা ইংরাজি সাহিত্য হইতে যাহা-কিছু শিক্ষা পাইতেছি তাহার একেবারে আরম্ভ হইতে বাংলা ভাষায় নূতন করিয়া চিন্তা করিয়া লইতে হইতেছে। ইংরাজিতে সেগুলা হয়তো অত্যন্ত গোড়াকার কথা, এবং সমালোচকের চক্ষে তাহা যৎসামান্য ও নূতন নিহে। কিন্তু বাংলায় তাহা নূতন আবিষ্কৃত। নূতন আবিষ্কারের মধ্যে যে তেজ ও উজ্জ্বলতা থাকে উক্ত সামান্য কথাগুলিও বাংলায় সেই মহিমা লাভ করে। পুরাতন কথা নূতন হৃদয়ের মধ্যে সদ্য পুনর্জন্ম লাভ করিয়া নবজীবন প্রাপ্ত হয়। বর্তমান কালে ইংরাজি ভাষার অধিকাংশ লেখক নির্মাণ কার্যে নিযুক্ত আছেন, অর্থাৎ পুরাতন পরিচিত ভাবগুলি লইয়া বিচিত্র আকারে বিন্যাস করিতেছেন মাত্র। বঙ্গ ভাষায় সৃষ্টি করিতে হইতেছে, সুতরাং অন্য সাহিত্যের ক্ষুদ্র কথাটিও বাংলা ভাষায় অত্যন্ত মহৎ । আমাদের হৃদয়ে বিবিধ কর্মকাণ্ডের সংঘর্ষজনিত প্ৰবল আবেগ নাই বটে তথাপি যেটুকু উত্তাপ আছে তাহাই অনুরাগভরে সঞ্চারিত করিয়া Fossiা সত্যগুলিকে পুনজীবিত করিয়া তুলিতেছি। যাঁহাদের লেখনীমুখে বঙ্গভাষায় সেই অর্ধজড়ত্বপ্রাপ্ত যৌবনহারা সত্যগুলি নববসন্ততাপে বিকশিত হইয়া উঠিতেছে, তাহারা সেই সৃজনের আনন্দে পুথিপড়া সমালোচকের উপেক্ষাকে উপেক্ষা করিতে পারেন। p বঙ্গদেশে প্রকৃত সাহিত্যের সমালোচনা করিতে পারেন এমন কয়জন লোক আছেন। কেহ নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। প্রচলিত বাংলা ভাষায় জ্যেঠামি’ নামক একটি শব্দ আছে সেটি শ্রুতিমধুর নহে; কিন্তু আমাদের সমালোচনাকে আর কোনাে নাম দেওয়া যায় না। যে ছেলে বুড়োদের মতো পাকা কথা কহে তাহাকে আমরা জ্যাঠা বলি। অর্থাৎ যাহার অভিজ্ঞতা নাই। অথচ অভিজ্ঞতার বচনগুলি আছে সেই জ্যাঠা। বঙ্গদেশে আমাদের কোনো সাহিত্যের প্রকৃত অভিজ্ঞতা নাই। ইংরাজি সাহিত্য আমরা বই পড়িয়া জানি এবং বঙ্গসাহিত্য এখনাে নূতন উর্বরা দ্বীপের ন্যায় অজ্ঞাত সমুদ্রগর্ভ হইতে সম্পূর্ণ জাগিয়া উঠে নাই। আমরা কোনো জীবনচঞ্চল সাহিত্যের সৃজনকার্যের মধ্যে থাকিয়া মানুষ হইয়া উঠি নাই। সুতরাং সাহিত্যের সেই অমোঘ নাড়িজ্ঞানটুকু আমরা লাভ করিতে পারি নাই। আমরা সাবধানে ভয়ে ভয়ে তুলনা করিয়া পুথি মিলাইয়া বিচার করি। কিন্তু সাহিত্যের ন্যায় জীবন্ত বস্তুর পক্ষে এরূপ নিজীব বিচারপ্রণালী একেবারেই অসংগত। প্রতিক্ষণেই তাহার মধ্যে এত বিচিত্র আকার ও আলোকছায়ার সমাবেশ হইতেছে যে অলক্ষিতে বহুকালসঞ্চিত আন্তরিক সজাগ অভিজ্ঞতার দ্বারাই আমরা তাহার বিচার করিতে পারি। চিত্রবিদ্যাই বল কবিত্বই বল এক হিসাবে প্রকৃতির সমালোচনা। চিত্রশিল্পী প্রকৃতির সহস্ৰ আকারসংযোগের মধ্যে চিত্রপটের জন্য একটি বিশেষ অংশ নির্বাচন করিয়া লয়, কবি অন্তর ও বহিঃপ্রকৃতির মধ্যে বিশেষ একটি দৃশ্য কল্পনার আলোকে আলোকিত করিয়া লয়; এই নির্বাচনের উপরেই তাঁহাদের অমরত্ব নির্ভর করে। এই নির্বাচনেই কবি ও শিল্পীর সমালোচনশক্তি প্ৰকাশ পায়। বহুকাল হইতে অলক্ষিতে নিজের জীবনের মর্মমধ্যে প্রকৃতির যে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন তাহা হইতেই তাহারা এই অভ্রান্ত সমালোচনপটুত্ব লাভ করিয়াছেন। যদি তাহারা প্রকৃতির মধ্যে বাস না করিয়া প্রকৃতির সতত আবর্তিত পরিবর্তিত জীবন্ত শক্তির মধ্যে মানুষ না হইয়া কেবল অলংকারশান্ত্র ও সমালোচনার গ্রন্থ পাঠ করিতেন। তবে তাহারা কি আন্তরিক