সাহিত্য Sዒዓ হউক তাহার নারীপ্ৰকৃতি পরিপূর্ণ প্রাণশক্তিতে নিয়ত স্পন্দ্যমান; সে সমাজের কলে পিষ্ট এবং লেখকের গৃহ-নির্মিত নৈতিক চালুনিতে হাঁকা গৃহস্থের ঘরে ব্যবহার্য পয়লা নম্বরের পণ্যদ্রব্য নহে, সুবোধ গোপাল এবং সুমতি সুশীলার ন্যায়। সে বাংলাদেশের শিশুশিক্ষার দৃষ্টান্তস্থল বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। প্ৰাণের পরিবর্তে তৃণে পরিপূর্ণ মিউজিয়ামের সিংহী। যদি সহসা জীবনপ্রাপ্ত । হয় তবে রক্ষকমহলে যেরূপ একটা হুলস্থূল পড়িয়া যায়, ‘বেসি’র ন্যায় নায়িকা সহসা বঙ্গ সাহিত্যে দেখা দিলে সমালোচকমহলে সেইরূপ একটা বিভ্ৰাট বাধিয়া যায়, তঁহাদের সূক্ষ্ম বিচার এবং নীতিতত্ত্ব বিপর্যন্ত হইয়া একটা দুর্ঘটনা ঘটিবার সম্ভাবনা হয়। য়ুরোপে হঙ্গ্যোরির সহিত পোল্যান্ডের অনেক বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। সেখানে আধুনিক পোলসাহিত্যের নেতা ছিলেন ক্রাসজিউস্কি - ১৮৮৮ খৃস্টাব্দে ইহার মৃত্যু হইয়াছে। ১৮৭৯ খৃস্টাব্দে তাহার রচনারম্ভের পঞ্চাশাৎ বার্ষিক উৎসব পরম সমারোহের সহিত সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। তদুপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় তাহাকে উপাধি দান করে, কাপাখীয় গিরিমালার একটি শিখরকে তাহার নামে অভিহিত করা হয়। অস্ট্রিয়ার সম্রাট তাঁহাকে রাজসম্মানে ভূষিত করেন এবং দেশের লোকে মিলিয়া তাঁহাকে ছয় হাজার পাউন্ড মুদ্রা উপহার প্রদান করে। এ সম্মান শূন্য সম্মান নহে। সমস্ত জীবন দিয়া ইহা তাহাকে লাভ করিতে হইয়াছে। তিনিই প্রথম পোলীয় উপন্যাস রচয়িতা। যখন তাহার বয়স আঠারো তখন পঠদ্দশাতেই তিনি পােল্যান্ডের স্বাধীনতা উদ্ধারের জন্য সহপাঠীদিগকে বিদ্রোহে উত্তেজিত করিবার চেষ্টা । করিয়াছিলেন। সেই অপরাধে দুই বৎসর কারাবাস যাপন করিয়া পুনর্বাের তিনি বিদ্যালয়ে প্রবেশপূর্বক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। কারাগারে অবস্থানকালে তিনি পোলীয়ভাষার প্রথম উপন্যাস রচনা করিয়াছিলেন। পুনর্বার বিদ্রোহ অপরাধে জড়িত হইয়া তাহাকে পল্লীগ্রামে পলায়নপূর্বক বহুকাল সমাজ হইতে দূরে বাস করিতে হইয়াছিল। এবং অবশেষে পোল্যান্ড ত্যাগ করিয়া ১৮৬৩ খৃস্টাব্দে তিনি জর্মনিতে আশ্রয় গ্ৰহণ করেন এবং আমৃত্যুকালে আর স্বদেশে ফিরিতে পারেন নাই। সেখানেও বিসমার্কের রাজনীতির বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করাতে মৃত্যুর অনতিপূর্বে বৃদ্ধিবয়সে কারাদণ্ড ভোগ করিতে হয়। A ইহা হইতে পাঠকেরা বুঝিতে পরিবেন পর্বততুল্য কঠিন প্রতিভার দ্বারা আলোড়নপূর্বক কীর্যপ সংক্ষুব্ধ সমুদ্রমন্থন করিয়া এই পোলীয় মনস্বী অমরতাসুধা লাভ করিয়াছিলেন। পোল্যান্ডে একটি বৃহৎ জাতীয়-হৃদয় ছিল বলিয়া সেখানে জাতীয় সাহিত্য এবং জাতীয় সাহিত্যুবীর এত সমাদর প্রাপ্ত হইয়াছে এবং সে সাহিত্য এমন প্রভূত বলে আপন প্রভাব বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছে। এই লেখক-রচিত ‘ইহুদী’ নামক একটি উপন্যাসগ্রন্থ ইংরাজিতে অনুবাদিত হইয়াছে। তাহা পাঠ করিলে, পাঠকগণ জানিতে পরিবেন, লেখকের প্রতিভা জাতীয় হৃদয়ের আন্দোলন দোলায় কেমন করিয়া লালিত হইয়াছে। । বাংলা সাহিত্যের প্রসঙ্গে আমরা যে এই দুই হজ্যেরীয় ও পোলীয় লেখকের উল্লেখ করিলাম তাহার কারণ, ইহারা উভয়েই স্ব স্ব দেশে এক নব সাহিত্যের প্রতিষ্ঠা করিয়া দিয়াছেন। ইহারা করিয়াছেন। প্ৰায় এমন কোনো বিষয় নাই যাহা তাহারা নিজে স্বভাষায় প্রচলিত করেন নাই। শিশুদের সুখপাঠ্য মনোরম রূপকথার গ্রন্থ হইতে আরম্ভ করিয়া বিজ্ঞান দর্শন ইতিহাস পর্যন্ত সমস্তই তাহারা নিজে রচনা করিয়াছেন। তাহারা স্বদেশীয় ভাষাকে বিদ্যালয়ে বদ্ধমূল এবং নিজের ক্ষমতা প্ৰকাশ পায় বটে কিন্তু জাতির সজীবতাও সূচনা করে। আমাদের দেশে লেখকগণ বিচ্ছিন্ন বিষয়ে সঙ্গবিহীন। তাহারা বৃহৎ মানবহৃদয়ের মাতৃসংস্পর্শ
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/b/bf/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%B8%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page301-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%B8%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)