পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭৬ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী হন না। Please কথা বলিবার ভাবটার মূল যে রাসনায় নহে হৃদয়ে, ইহা মনে করিতে আপত্তিটা কী? আমার যে ভাবটি নাই, আর-এক ব্যক্তির সেই ভাব থাকিলেই তাছাকে মৌখিক বলিয়া মনে সহিত তাহার কোনো সম্পর্ক নাই বলিতে হইবে। তাহা হইলে আমরা যে পিতাকে প্ৰণাম করি, তাহা কৃত্রিম কাষ্ঠ-সভ্যতার প্রথা, তাহা আন্তরিক নহে। আমি তো বলি, এইরূপ মনে করা উচিত যে, ইংরাজ জাতির হৃদয়গত এমন একটি ভাব আছে, যাহাতে করিয়া তাহাকে স্বতই Please বলায়। সে ভাবটি কী? না তাহদের স্বাভাবিক স্বাতন্ত্র্য ভাব। তাহারা সকলেই নিজে নিজে নিজের কার্য করিতে চায় ও তাঁহাই করে, এই নিমিত্ত অপারে যতটুকুই কাজ করিয়া দেয়, তাহা যতই সামান্য হউক-না কেন, Thank you কথা। আপনি বাহির হইয়া পড়ে, এবং অপরকে সামান্য কাজটুকু করিতে বাধ্য করিতে হইলেও তাহারা Please না বলিয়া থাকিতে পারে না। আমরা যেমন অনেক সামান্য কাজে পরের উপর নির্ভর করি, এবং পরের নিকটে অনেকটা আশা করি, আমাদের অত সহজে Please ও Thank you বাহির হয় না। এমন হইতে পারে যে, প্রতিবারেই যখন তাহারা Please ও Thank you বলে তখন তাহদের হৃদয়ে ওইরাপ ভাব উদয় হয় না, কিন্তু ওই ভাব হইতে যে এই প্রথার উৎপত্তি তাহা কি কেহই অস্বীকার করবেন? আমরা যখন প্রতি অবসরেই প্রত্যেক গুরুজনকে প্ৰণাম করি তখন যে ভক্তির উচ্ছাস হইতে করি, তাহা নহে, অনেক সময়ে প্রথার বশবতী হইয়া করি, কিন্তু ইহা অসংকোচে বলা যায় যে, গুরুভক্তি আমাদের দেশে বিশেষ প্রচলিত। জাতীয় ভােব আমাদের কী অন্ধ করিয়াই তুলে! মনে করো আমাদের দেশে যদি কাৰ্বরের প্রথা প্রচলিত থাকিত ও ইংলন্ডে শবদাহ। প্রচলিত থাকিত তবে আমরা (অর্থাৎ জাতীয় ভাবোন্মত্ত পুরুষেরা) কী বলিতাম? আর আজকালই বা কী বলি, একবার কল্পনা করিয়া দেখা যাউক । আজকাল আমরা বলি, “দেখো দেখি শবদাহে ক'ত সুবিধা! স্থান সংক্ষেপ, ব্যয় সংক্ষেপ, স্বাস্থ্যরক্ষা ইত্যাদি। এমন-কি, আমাদের দেখাদেখি দেখো আজকাল যুরোপেও এই প্ৰথা প্রচলিত হইতেছে!’ আর আমাদের দেশে যদি কবর প্রথা প্রচলিত থাকিত, তবে আমরাই বলিতাম, “যে দেশে কাষ্ঠসভ্যতা প্রচলিত সেই দেশেই শবদােহ শোভা পায়! সুবিধাই কি সর্বস্ব হইল, আর হৃদয় কি কিছুই নহে? যে দেহে সামান্য আঘাত মাত্র দিতে কুষ্ঠিত হইয়াছি, যে দেহের স্পর্শে প্রভূত আনন্দ লাভ করিয়াছি, আজ তাহা কিনা অকাতরে দগ্ধ করিলাম? কী জন্য? না, স্থান সংক্ষেপের জন্য, ব্যয় সংক্ষেপের জন্য, সুবিধার জন্য? সহজ-সভ্য দেশের কি এই প্রথা ? আবার নিজ হস্তে প্রিয়জনের মুখাগ্নি করা কি সহৃদয় জাতির কাজ!” জাতীয় ভােব এইরূপ একটা অদূর-দৃষ্টি, যুক্তিহীন অথচ গো-বিশিষ্ট ভাব। উহা দ্বারা অতিমাত্র বিচলিত হওয়া সাধারণ লোকদের কাজ, চিন্তাশীল লোকদের নহে! ভারতী bs > Rbra জুতা-ব্যবস্থা (১৮৯০ খৃস্টাব্দে লিখিত) গবর্নমেন্ট একটি নিয়মজারি করিয়াছেন যে, “যে হেতুক বাঙালিদের শরীর অত্যন্ত বে-জুৎ হইয়া গিয়াছে, গবর্নমেন্টের অধীনে যে যে বাঙালি কর্মচারী আছে, তাহদের প্রত্যহ কাৰ্যারম্ভের পূর্বে জুতাইয়া লওয়া হইবে।” ।