পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ff add একমাত্র আমার কথাই ভাবিস না, কে কী বলে তাই ভাবিয়া সারা। আবার আমার চিরায়ুম্মান জামাইটির মতো খামখেয়ালি মেজাজের লোক অতি আছে। সে আজ আদর করিল বলিয়া যে কালও আদর করিবে তাহা নহে। এক-এক সময় তাহার | এক-একটি সুয়ারানী থাকে তাহারই প্রাদুর্ভাবে আর বাকি সকল রূপবতী গুণবতীগণ দুয়ারানীর শ্রেণীতে গণ্য হইয়া যায়। তাহার রাজতন্তঃপুরে কত আদরের মহিষী আছে, তাহদের মধ্যে আমার এই গুটিকতক ভীরু স্বভাব দুর্বল কুসুম-পেলবা কন্যা স্থাপন করা কি ভালো হইল! একবার চাহিয়া দেখো, অপরিচিত স্থানে গিয়া, অনভ্যস্ত অলংকার পরিয়া উহাদের মুখশ্ৰীর স্বাভাবিকতা যেন চলিয়া গিয়াছে। উহাদিগকে যেন এক সার কাঠের পুতুলের মতো দেখাইতেছে। আর যাহাঁই হউক, আমার এ সাদাসিধা পাড়াগেয়ে কবিতাগুলিকে এরকম ছাপার অক্ষরে মানায় না। দম্ভোলি, ইরম্মদ ও কড়কড় শব্দ নহিলে যেন ছাপার অক্ষর সাজে না। এমন কাজ কেন করিলাম! কবিতাগুলি যখন খাতায় ছিল তখন আমার সুখের কি অভাব ছিল! এখন যে সকলেই বিদেশীর মতো ইহার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিবে! কেহ বলিবে ভালো, কেহ বলিবে মন্দ, কেহ সম্মান করিবে, কেহ অপমান করিবে, কিন্তু ইহার ক্ৰটি তো কেহই মার্জনা করিবে না; ইহাকে আপনার লোক বলিয়া কেহই তো কোলে তুলিয়া লইবে না! আপনার ধন পরের সম্পত্তি হইয়া গেল, যে যাহা করে, যে যাহা বলে চুপ করিয়া সহিতেই হইবে। আয় রে ফিরিয়া আয়- তোদের সেই কঁচা অক্ষর, বানান-ভুল, কালির দাগের মধ্যে ফিরিয়া আয়, স্নেহের আরামে থাকিবি। চব্বিশ ঘণ্টা সোজা লাইনের নীচে অমনতর খাড়া হইয়া থাকিতে হইবে | জ্যৈষ্ঠ ১২৯০ - গোফ এবং ডিম সকলেই বলিতেছেন, এখানে গোঁফ না বলিয়া গুম্ফ বলা উচিত ছিল। আমি বলিতেছি তাহার | কোনো আবশ্যক নাই। গোফটা কিছু এমন একটা হেয় পদার্থনহে যে, তাহাকে সংস্কৃত গঙ্গাজলে না ধুইয়া ভদ্রসমাজে আনা যায় না। স্বনাম পুরুষো ধন্যঃ। গোঁফের পিতামহের নাম ছিল গুম্ফ'; তিনি ভরদ্বাজ, কাশ্যপ, শাণ্ডিল্যদের মুখে যথাকাল বিরাজ করিয়া গুম্ফলীলা সংবরণ করিয়াছেন, তঁহারই কুল-কজল বংশধর শ্ৰীযুক্ত গােঁফ অধুনা চাটুর্যে বঁড়িয্যে মুখুয্যেদের ওষ্ঠ বৈদূর্য সিংহাসনের উপর উপবিষ্ট হইয়া দিবারাত্ৰি নাসারান্ধের সমীরণ সুখে সেবন করিতেছেন। অতএব গোঁফ যখন তাহার পিতা-পিতামহের বাস্তুভিটা না ছাড়িয়া তাহার পাঁচ-ছয় সহস্ৰ বৎসরের পৈতৃক স্বত্ব সমান প্রভাবে বজায় রাখিয়াছে, তখন যদি তাহাকে তাহার নিজের নামে অভিহিত শিক্ষর নামে তাহার পরিচয় দেওয়া হয় তবে অভিমানে সে লুকের নীত 1 তোমাদের কল্পনাশক্তি সামান্য, এইজন্যই ছোটাে কথাকে বড়ো করিয়া না বলিলে তোমাদের কানে পৌঁছায় না! বাজের শব্দ তোমরা শুনিতেই পাও না, কাজেই তোমাদের জন্য ইরম্মদের কৰ্ভুকড় করা আবশ্যক। প্রকৃতির ছােটাে জিনিসের মহত্ত্ব তােমরা দেখিতে পাও না, এইজন্য তোমাদিগকে হাঁ করাইবার অভিপ্ৰায়ে বড়ো বড়ো আতস কাচ আনাইয়া শিশুদের মুখের উপর ধরিয়া তাহাদিগকে দৈত্য দানব করিয়া তুলিতে হয়। কিন্তু তাই বলিয়া যে তোমাদের স্কুল কল্পনাকে আঁকড়াইয়া ধরিবার জন্য আমি এই দুই-চারি ইঞ্চি গোঁফকে টানিয়া টানিয়া চিনেম্যানের টিকির মতো অযথা পরিমাণে বাড়াইয়া তুলি, এবং গোঁফ শব্দের সহজ-মােহাষ্মের পেটের মধ্যে গোটা আষ্ট্রেক-দশ বড়ো বড়ো অভিধানপুরিয়া তাহাকে উদরী রোগীর মতো অসম্ভব স্ফীত