পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সারসংগ্ৰহ . Ve »» শত তীক্ষ অঙ্কুশ বিদ্ধ হইয়া তাহদের আর্তনাদের একমাত্র আশ্ৰয়স্থল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ব্রিটিশ প্ৰজা। অতএব শাসকই হউন আর ব্যবস্থাপকই হউন, পার্লামেন্টের প্রভাব হইতে পৃথক হইয়া, ভারতশাসন ও ভারতীয় বিধিব্যবস্থা প্ৰস্তুত করুন, এরাপ প্ৰস্তাবে এদেশীয়রা কিছুতেই সায় দিতে পারে না। এ সম্বন্ধে মি. মেহতা ব্যবস্থাপক সভায় যাহা বলিয়াছেন, তাহই এদেশীয় সমীচীন ব্যক্তিমাত্রের মত। হইতে পারে, অনেক সময়ে পার্লামেন্ট হইতে অবিচার ও এদেশীয় ব্যবস্থাপক সভা ও ভারত গবর্নমেন্টের নিকট সুবিচারের সম্ভাবনা আছে; কিন্তু তাহা সত্ত্বেও পার্লামেন্টের উপর, শেষ বিচারের জন্য, নির্ভর করা ভিন্ন উপায় নাই। পালিয়ামেন্টীয় শাসন ও অ্যাংলোইন্ডিয়ানের শাসন দুয়ের কোনোটিই অবশ্য সম্যকরাপে নিরাপদ নহে; কেননা সময়ে সময়ে প্রবল স্বাৰ্থ সংঘাতে সমূহ অমঙ্গলেরই সম্ভাবনা; পক্ষান্তরে এদেশীয়দিগের নিজের শাসনও এখন আকাশকুসুম অপেক্ষাও অসম্ভব; এরাপ স্থলে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের শাসন অপেক্ষা পালিয়ামেন্টের শাসনই আমাদের পক্ষে শ্রেয়; যেহেতু পালিয়ামেন্টের ও ব্রিটিশ প্রজাসাধারণের ন্যায়পরতা ও মহত্ত্ব সাধারণত অধিকতর বিশ্বসনীয়। পুলিস রেগুলেশন বিল এই বিলটি ১৮৬১ সালের ৫ আইন সংশোধনের পাণ্ডুলিপি। ইহার ১৫ ধারার লিখিত বিষয়টি সংশোধন সম্বন্ধেই সমস্যা। ওই ধারার পূর্ব মর্মানুসারে নিয়ম ছিল এই যে, কোনো স্থানে বাদ বিসম্বাদ ৰা। যে-কোনো কারণেই হউক দাঙ্গা হাঙ্গামা হইয়া শান্তিভঙ্গ হইলে বা শান্তিভঙ্গের সম্ভাবনা থাকিলে, তথাকার শান্তিরক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিস প্রহরী নিযুক্ত হইত এবং তাহার নির্বহার্থে স্থানীয় অধিবাসীদিগের উপর একটি কর সংস্থাপিত হইত। কর সংস্থাপিত হইত। দোষী ও নির্দোষী নির্বিশেষে ; দাঙ্গায় সংশ্লিষ্ট থাকুক বা না থাকুক স্থানীয় লোক মাত্রই সে কর দিতে আইনানুসারে বাধ্য হইত। কিন্তু এরূপ আইন স্পষ্টত অন্যায়। ইহা কখনোই ন্যায়ানুমোদিত হইতে পারে না যে দোষীর সহিত নির্দোষীও শাস্তি পাইবে। নির্দোষীর শাস্তি নিবারণ উপরোক্ত সংশোধনের উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য সাধনের উপায় উদ্ভাবন করা দুষ্কর। গবর্নমেন্ট যে উপায় অবলম্বন করিতে চাহেন তাহাতে দোষী ও নির্দোষী নির্বাচনের ভার জিলার মাজিস্টর ও জািজদিগের উপর বিন্যস্ত হয়। জজ বা মাজিস্টর ইহাদের যিনিই হউন স্থানীয় অবস্থা বুঝিয়া দোষী ও নির্দোষী নির্বাচনে ক্ষম্যবান হইবেন। সে ক্ষমতা পরিচালন করার দ্বারা দোষী ও নির্দোষী নিরাকরণিকল্পে, দস্তুর মতো বিচার প্রণালী অবলম্বন করিয়া সাক্ষ্য প্ৰমাণাদি গ্রহণ ও উকিল-মোক্তারের সোয়াল জবাব গ্ৰহণান্তে, রায় লিখিত হইবে না- জজ বা মাজিস্টর স্থানীয় অবস্থানুসারে যাহা স্থির করিবেন তাহাই হইবে। দস্তুর মতো দেওয়ানি বিচার যখন হইবে তথম অবশ্য তাহার দেওয়ানি আপিলও চলিবে না। তবে বিভাগীয় কমিশনােরর উহাতে হাত গবর্নমেন্ট পক্ষের যুক্তি এই যে এরূপ স্থলে দস্তুর মতো দেওয়ানি বিচার দ্বারা দোষী নির্দোষী নির্ধারণ করা সুকঠিন; অথচ নির্দোষীরও রক্ষা পাওয়া উচিত। শান্তি রক্ষা করিতে গবর্নমেন্ট স্বতঃ বাধ্য। শান্তিরক্ষার্থে, শান্তিভঙ্গের দণ্ডের জন্য দেওয়ানি বিচার সম্ভাবে না। অতএব শাসন ও শান্তি অক্ষুন্ন রাখিয়া নির্দোষী দিগকে অব্যাহতি দিবার জন্য জিলার জজ ও মাজিস্টরদিগকে যে অধিকার দেওয়া হইতেছে ইহাই প্রচুর। পূর্বে দোষী ও নির্দোষী দেশসুদ্ধ লোকেরই দণ্ড হইত, এখন অন্তত কতক লোকও তো রক্ষা পাইবে। নির্দোষী মাত্রই পরিত্রাণ না পাউক তাহদের কতকও তো পাইবে। সংশোধিত আইন সর্বাঙ্গসুন্দর না হইলেও উহা মন্দের ভালো। বিশেষত এ আইন দণ্ড দিবার জন্য নয়, দাঙ্গা নিবারণই ইহার উদ্দেশ্য। গবর্নমেন্টের যুক্তি এই। অপর পক্ষের কথা এই যে, শান্তিভঙ্গের আশঙ্কাস্থলে যখন দেবী নির্দোষী সকলেরই উপর