পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সারসংগ্ৰহ ዓ oas এক্সচেঞ্জের হিসাবে ধরিয়াও তোমাদের স্বদেশের সহিত এখানকার বেতনের তুলনা করিয়া দেখো। এখানে বিদেশে থাকিয়া তোমাদের খরচ বেশি হয় ? কেন হয় ? এমন যদি বুঝিতাম। এখানে তোমাদের যেরাপ চাল বিলাতেও তোমাদের সেই চাল তাহা হইলে আমাদের কোনো আপত্তির কারণ ছিল না। বিলাতের মধ্যবিত্ত অবস্থায় কয়জন লোক বৎসরের মধ্যে কয়দিন শ্যাম্পেন-ডিনার ভোগ করিয়া থাকে? এ কথা কি সাহেবরা অস্বীকার করিতে পারেন যে, ভারতবর্ষে তাহারা বিস্তর অনভ্যস্ত এবং অনাবশ্যক নবাবী করিয়া থাকেন ? সে-সমস্ত যদি তাহারা কিঞ্চিৎ খাটো করিতে প্ৰস্তুত হইতেন তাহা হইলে কি আমাদের এই সকল অর্ধউপবাসীদের কষ্টসঞ্চিত উদরান্নে হাত দিতে হইত ? গল্পে কথিত আছে, বাবু যখন গোয়ালার বিল হইতে তাহার অর্ধেক পাওনা কাটিয়া দিলেন তখনও সে প্রসন্নমুখে তাহাকে প্ৰণাম করিয়া চলিয়া গেল— তাহার প্রসন্নতার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে কহিল, এখনও দুধে পৌঁছায় নাই। অর্থাৎ কাটােটা কেবল জলের উপর দিয়াই গিয়াছে। প্রতিকুল এক্সচেঞ্জেও এখনও সাহেবদের হুইস্কি সোডা এবং মুগি মটনে আঘাত করে । নাই তাহা বড়ো জোর শ্যাম্পেন টোকে, এবং অতিরিক্ত ঘোড়া ঘোড়দৌড়ের উপর দিয়াই গিয়াছে; কিন্তু কম্পেনসেশন অ্যালাউয়েন্স আমাদের মোটা চাউল এবং বহুজলমিশ্রিত কলাইয়ের ডালে গিয়া হস্তক্ষেপ করিয়াছে। আমরা বলিতেছি, তোমাদের ভারত শাসনের যন্ত্রটা অত্যন্ত বহুব্যয়সাধ্য হইয়াছে’- যদি অধিকতর পরিমাণে দেশী লোক নিয়োগ কর তাহা হইলে সস্তা হয়। তাহাতে যে কাজ খারাপ হয় এমন কোনো প্ৰমাণ নাই। তোমরা বলিবে সে কোনো মতেই হইতে পারে না। তোমাদের কথাটা এই, আমরা সৈন্য বিভাগের বিস্তার করিব, ভারতবর্ষের দুশো-পাঁচশো মাইল দূরে যেখানে যত ভীমরুলের চাক আছে গায়ে পড়িয়া সবগুলাতে খোচা মারিয়া বেড়াইব, ইংরাজ কর্মচারীদিগকে ক্ষতিপূরণবৃত্তি দিব, এবং মোটা পদের ইংরাজ কর্মচারী নিয়োগ করিয়া ভারতবর্ষের রক্তরিক্ত দেহে মোটা দাঁত বসাইয়া খাদ্য শোষণ করিব- ইহার অন্যথা হইবে না, এক্ষণে ব্যয়ীসংক্ষেপ সম্বন্ধে আমাদিগকে কাজের পরামর্শ দাও । অনেক সময় যথার্থ কাজের পরামর্শ অত্যন্ত সহজ এবং পুরাতন। অজীর্ণ রোগী যত বড়ো ডাক্তারের নিকট উপদেশ লাইতে যাক সকলেই বলিবেন, তুমি পথ্যসংযম করো। কিন্তু রোগী যদি বলে ‘ওটা কোনো কাজের কথা হইল না— আমি ঘূতপক্ক অখাদ্য খাইবই, এবং ক্ষুধার অবস্থা যেমনই থাক আহারের পরিমাণ বাড়াইতে থাকিব, তুমি যদি বড়ো ডাক্তার হও আমাকে একটা চিকিৎসার উপায় বলিয়া দাও”- তবে সে রোগীর নিকট খাদ্য পরিবর্তন, বায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি স্বাস্থ্যতত্ত্বের সমস্ত মূলনীতিই নিতান্ত বাজে এবং সাধারণ কথা বলিয়াই মনে হইবে। বিবাহ করিতে উদ্যত কোনো যুবকের প্রতি পাঞ্চ পত্রিকার একটি অত্যন্ত সহজ এবং সংক্ষিপ্ত উপদেশ ছিল- সেটি এই— “এমন কাজ করিয়ো না!” অপব্যয় করিতে উদ্যত গবর্মেন্টের প্রতিও এতদপেক্ষা সহজ এবং সংগত উপদেশ হইতে পারে না। ফেরোজ শা। মেটা সেই উপদেশটি দিয়াছিলেন- তাহাতেই কর্তারা অত্যন্ত উত্মা প্রকাশ্যপূর্বক বলিয়াছিলেন ইহা কোনো কাজের উপদেশ হইল না। - বেয়াদব কীেন্সিল সভায় একটা নূতন জীবনের লক্ষণ দেখা দিয়াছে ইহাতেই রাজপুরুষেরা কিছু ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন। এতদিন মন্ত্রণাকার্য যেন যন্ত্রের মতো চলিয়া আসিতেছিল এখন হঠাৎ তাহারই মাঝখানে একটা ব্যথিত হািদয়ের আওয়াজ শুনিয়া ছোটো হইতে বড়োকর্তা পর্যন্ত ক্ষিপ্তপ্রায়