পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সারস্বত সমাজ ১ ১২৮৯ সালে শ্রাবণ মাসের প্রথম রবিবারে ২ তারিখে দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলি ৬ নম্বর ভবনে সারস্বত সমাজের প্রথম অধিবেশন হয়। ডাক্তর রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতির আসন গ্ৰহণ করেন। সারস্বত সমাজ স্থাপনের আবশ্যকতা বিষয়ে সভাপতি মহাশয় এক বক্তৃতা দেন। বঙ্গভাষার সাহায্য করিতে হইলে কী কী কার্যে সমাজের হস্তক্ষেপ করা আবশ্যক হইবে, তাহা তিনি ব্যাখ্যা করেন। প্রথমত, বানানের উন্নতিসাধন। বাংলা বর্ণমালায় অনাবশ্যক অক্ষর আছে কি না এবং শব্দবিশেষ উচ্চারণের জন্য অক্ষরবিশেষ উপযোগী কি না, এই সমাজের সভ্যগণ তাহা আলোচনা করিয়া স্থির করিবেন। কাহারও কাহারও মতে আমাদের বর্ণমালায় স্বরের হ্রস্ব-দীর্ঘ ভেদ নাই, এ তর্কটিও আমাদের সমাজের সমালোচ্য। এতদব্যতীত ঐতিহাসিক অথবা ভৌগোলিক নাম-সকল বাংলায় কীরাপে বানান করিতে [ হইবে তাহ ] স্থির করা আবশ্যক। আমাদের সাম্রাঞ্জীর নামকে অনেকে “ভিকটাে রিয়া” বানান ] করিয়া থাকেন, অথচ ইংরাজি “V” অক্ষরের স্থলে অভ্যস্থ “ব” সহজেই..হইতে পারে। ইংরাজি পারিভাষিক শব্দের অনুবাদ লইয়া বাংলায় বিস্তর ... ঘটিয়া থাকে- এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া সমাজের কর্তব্য। দৃষ্টান্ত] স্বরূপে উল্লেখ করা যায়ইংরাজি listhmus শব্দ কেহবা। “ডমরু-মধ্য” কেহবা “যোজক” বলিয়া অনুবাদ করেন, উহাদের মধ্যে কোনোটাই হয়তো সার্থক হয় নাই - অতএব এই সকল শব্দ নির্বাচন বা উদভাবন করা সমাজের প্রধান কাৰ্য। উপসংহারে সভাপতি কহিলেন- এই সকল, এবং এই শ্রেণীর অন্যান্য নানাবিধ সমালোচ্য বিষয় সমাজে উপস্থিত হইবে- যদি সভ্যগণ মনের সহিত অধ্যবসায় সহকারে সমাজের কার্ষে নিযুক্ত থাকেন তাহা হইলে নিশ্চয়ই সমাজের উদ্দেশ্য সাধিত হইবে। পরে সভাপতি মহাশয় সমাজের নিয়মাবলী পর্যালোচনা করিবার জন্য সভায় প্রস্তাব করেন। স্থির হইল- বিদ্যার উন্নতিসাধন করাই এই সমাজের উদ্দেশ্য। তৎপরে তিন-চারিটি নামের মধ্য হইতে অধিকাংশ উপস্থিত সভ্যোর সম্মতিক্রমে সভার নাম স্থির হইল সারস্বত সমাজ। সমাজের দ্বিতীয় নিয়ম নিম্নলিখিত মতে পরিবর্তিত হইলযাহারা বঙ্গসাহিত্যে খ্যাতিলাভ করিয়াছেন এবং যাহারা বাংলাভাষার উন্নতিসাধনে বিশেষ । অনুরাগী, তাহারাই এই সমাজের সভ্য হইতে পরিবেন। সমাজের তৃতীয় নিয়ম কাটা হইল। . [ সমাজের } চতুর্থ নিয়ম নিম্নলিখিত মতে রূপান্তরিত হইলসমাজের মাসিক অধিবেশনে উপস্থিত সভ্যোর মধ্যে অধিকাংশের ঐকমত্যে নুতন সভ্য গৃহীত হইবেন। সভ্যগ্রহণ কর্ষে গোপনে সভাপতিকে মত জ্ঞাত করা হইবেক। সমাজের চতুর্বিংশ নিয়ম নিম্নলিখিত মতে রূপান্তরিত হইল— ‘’ ৷ সভ্যাদিগকে বার্ষিক ৬ টাকা আগামী চান্দা দিতে হইবেক। যে সভ্য এককালে ১০০ টাকা চাদা দিবেন। তঁহাকে ওই বার্ষিক চান্দা দিতে হইবেক না। অধিকাংশ উপস্থিত সভ্যোর সম্মতিক্ৰমে বর্তমান বর্ষের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ সমাজের কর্মচারীরাপে নির্বাচিত হইলেন। সভাপতি। ডাক্তর রাজেন্দ্ৰলাল মিত্র। সহযোগী সভাপতি। শ্ৰীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ডাক্তর শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর। याकूद्ध।