পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

898. * রবীন্দ্র-রচনাবলী যেমন খুশি হয় শচীশ আমাদের বিবাহের ব্যাপার লইয়া তেমনি খুশি হইয়া উঠিল । আমরা ভাবিয়াছিলাম চুপচাপ করিয়া সারিব, শচীশ কিছুতেই তা হইতে দিল না । বিশেষত জ্যাঠামশায়ের সেই মুসলমানপাড়ার দল যখন খবর পাইল তখন তারা এমনি হল্লা করিতে লাগিল যে, পাড়ার লোকে ভাবিল কাবুলের আমির আসিয়াছে বা অন্তত হাইদ্রাবাদের নিজাম । । আরও ধুম হইল কাগজে । পরবারের পূজার সংখ্যায় জোড়া বলি হইল। আমরা অভিশাপ দিব না। জগদম্ব সম্পাদকদের তহবিল বৃদ্ধি করুন এবং পাঠকদের নররক্তের নেশায় অন্তত এবারকার মতো কোনো বিঘ্ন না ঘটুক । শচীশ বলিল, বিশ্ৰী, তোমরা আমার বাড়িটা ভোগ করো’সে । আমি বলিলাম, তুমিও আমাদের সঙ্গে আসিয়া যোগ দাও, আবার আমরা কাজে লাগিয়া যাই । শচীশ বলিল, না, আমার কাজ অন্যত্র । দামিনী বলিল, আমাদের বউভাতের নিমন্ত্রণ না সারিয়া যাইতে পরিবে না । বউভাতের নিমন্ত্রণে আহূতদের সংখ্যা অসম্ভব রকম অধিক ছিল না। ছিল ওই শচীশ । 蠟 শচীশ তো বলিল আমাদের বাড়িটা আসিয়া ভোগ করো’, কিন্তু ভোগটা যে কী সে আমরাই জানি । হরিমোহন সে বাড়ি দখল করিয়া ভাড়াটে বসাইয়া দিয়াছেন। নিজেই ব্যবহার করিতেন, কিন্তু পারলৌকিক লাভ-লোকসান সম্বন্ধে যারা তার মন্ত্রী তারা ভালো বুঝিল না— ওখানে প্লেগে মুসলমান মরিয়াছে। যে ভাড়াটে আসিবে তারও তো একটা— কিন্তু কথাটা তার কাছে চাপিয়া গেলেই হইবে । বাড়িটা কেমন করিয়া হরিমোহনের হাত হইতে উদ্ধার করা গেল সে অনেক কথা। আমার প্রধান সহায় ছিল পাড়ার মুসলমানরা। আর কিছু নয়, জগমোহনের উইলখানা একবার তাদের দেখাইয়াছিলাম। আমাকে আর উকিলবাড়ি হঁাটাইটি করিতে হয় নাই । 尊 এপর্যন্ত বাড়ি হইতে বরাবর কিছু সাহায্য পাইয়াছি, সেটা বন্ধ হইয়াছে। আমরা দুই জনে মিলিয়া বিনা সহায়ে ঘর করিতে লাগিলাম, সেই কষ্টেই আমাদের আনন্দ । আমার ছিল রায়চাঁদ-প্রেমচাঁদের মার্ক ; প্রোফেসারি সহজেই জুটিল। তার উপরে একজামিন-পাশের পেটেণ্ট ঔষধ বাহির করিলাম— পাঠ্যপুস্তকের মোটা মোট নোট । আমাদের অভাব অল্পই, এত করিবার দরকার ছিল না । কিন্তু, দামিনী বলিল, শচীশকে যেন তার জীবিকার জন্য ভাবিতে না হয় এটা আমাদের দেখা চাই । আর