পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ج ه في ‘সম্মার্জনী’-নামক সাপ্তাহিক পত্রে লিখিয়াছেন— হরিহরপুরের মুনিসিপালিটির বিরুদ্ধে গোবিন্দবাবুর যে স্বগভীর প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে তাহা প্রাঞ্চল ও ওজৰী হইয়াছে সন্দেহ নাই, কিন্তু একটি বিষয়ে দুঃখিত ও আশ্চর্য হইলাম, ইনি পরের ভাব অনায়াসেই নিজের বলিয়া চালাইয়াছেন। এক স্থলে বলিয়াছেন, জন্মিলেই মরিতে হয়— এই চমৎকার ভাবটি যদি গ্রীক পণ্ডিত সক্রেটিসের গ্রন্থ হইতে চুরি না করিতেন তবে লেখকের মৌলিকতার প্রশংসা করিতাম। নিম্নে আমরা কয়েকটি চোরাই মালের নমুনা দিতেছি— গিবন বলিয়াছেন, রাজ্যে রাজা না থাকিলে সমূহ বিশৃঙ্খলা ঘটে ; গোবিন্দবাবু লিখিয়াছেন, একে অরাজকতা তাহাতে অনাবৃষ্টি, গগুস্তোপরি বিস্ফোটকং । সংস্কৃত শ্লোকটিও কালিদাস হইতে চুরি । রাস্কিনে একটি বর্ণনা আছে, আকাশে পূর্ণচন্দ্র উঠিয়াছে, সমুদ্রের জলে তাহার জ্যোৎস্না পড়িয়াছে। গোবিন্দবাবু লিখিয়াছেন, পঞ্চমীর চাদের আলো রামধনবাবুর টাকের উপর চিক্‌ চিক্‌ করিতেছে। কী আশ্চর্য চুরি । কী অদ্ভূত প্রতারণা ! কী অপূর্ব দুঃসাহসিকতা ! ‘সংবাদসার’ বলেন— ‘রামধনবাবু যে নেউগিপাড়ার খামাচরণ ত্রিবেদী তাহাতে সন্দেহ নাই । স্যামাচরণবাবুর টাক নাই বটে, কিন্তু আমরা সন্ধান লইয়াছি তাহার মধ্যম ভ্রাতুপুত্রের মাথায় অল্প অল্প টাক পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে। এরূপ ব্যক্তিগত উল্লেখ আতিশয় নিন্দনীয় ।” আমার নিজেরই গোলমাল ঠেকিতেছে। আমার প্রবন্ধ যে হরিহরপুর মুনিসিপালিটির বিরুদ্ধে লিখিত তৎসম্বন্ধে সম্মার্জনী’র যুক্তি একেবারে অকাট্য। হরিহরপুর চব্বিশ-পরগনায় না তিব্বতে না হাসখালি সবডিবিজনের অন্তর্গত আমি কিছুই অবগত নহি ; সেখানে যে মুনিসিপালিটি আছে বা ছিল বা ভবিষ্যতে হইবে তাহা অামার স্বপ্নের অগোচর । অপর পক্ষে, আমার প্রবন্ধে আমি নেউগিপাড়ার শুণমাচরণ ত্রিবেদী মহাশয়ের প্রতি অন্যায় কটাক্ষপাত করিয়াছি, এ সম্বন্ধেও সন্দেহ করা কঠিন । ‘সংবাদসার’ এমনি নিবিড়ভাবে প্রমাণ প্রয়োগ করিয়াছেন যে, তাহার মধ্যে ছুচ চালাইবার জো নাই । আমি একজনকে চিনি বটে, কিন্তু সে বেচারা ত্রিবেদী নয়, মজুমদার , তার বাড়ি নেউগিপাড়ায় নয়, ঝিনিদহে ; আর তার ভ্রাতু-পুত্রের মাথায় টাক থাকা চুলায় যাক, তাহার ভ্রাতুষ্পুত্রই নাই, দুইটি ভাগিনেয় আছে বটে । যাহারা বলেন আমি বরাকরের পাথুরিয়া কয়লার খনির মালেকদের চরিত্রের