পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী এসে কয়েকদিন থাকলে ভাল হয়। দেখ সখদঃখ, ব্যারামস্যারাম আমাদের সকলেরই আছে, ব্যারামের সময় আপনার লোক যতটা করে, পরে কি ততটা করে ? এই সাধার ব্যারাম হল, বাব ছিলেন, শরৎ ছিল, কত যত্ন, কত শুশ্ৰুষা করলে, তবে আরাম হল। তুমিও বোন বড় কাহিল হয়ে গেছ, সব্বদা কাশছ, এখন থেকে একটা যত্ন নেওয়া ভাল। তা আমার কথা রাখবোন, জ্যেঠাইমাকে আজই চিঠি লেখ, না হয় আমায় বল, আমিই লিখছি। আহা উমা, তুমি কি ছিলে বোন, আর কি হয়ে গেছ ! এই বলিয়া বিন্দ সস্নেহে উমার কপালে হাত বলাইয়া কপাল থেকে চুলগুলি সরাইয়া দিলেন। এইটুকু স্নেহ উমা অনেক দিন পান নাই, এইটুকুতে তাঁহার হৃদয় উথলিল, চক্ষ দইটী ছল ছল করিল, একটা দীঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া উমা ধীরে ধীরে বললেন, "বিন্দীদাদ তুমি আমাকে ছেলেবেলা থেকে বড় ভালবাস” আর কথা বাহির হইল না, উমা চক্ষর জল অঞ্চল দিয়া মছিলেন। বিন্দ অতিশয় স্নেহের ভাষায় বলিলেন, “উমা, তুমি কি আমাকে ভালবাস না ?” উমা। আমি, যতদিন বাঁচব, তোমাকে ভালবাসব। বিন্দ। তবে বোন, আজ আমার কাছে এত গোপন চেটা কেন ? তোমার মনের দুঃখ কি আমি বুঝিনি ? জগতে তোমার সখের আশা শেষ হয়েছে তা কি আমি বুঝিনি ? বিবাহের পর যে প্রণয়ে তুমি ভাসতে, আমার সঙ্গে দেখা হলেই যে কথা আমাকে বলতে, সে প্রণয়-সুখশেষ হয়েছে, তা কি আমি বুঝিনি ? উমা, তুমি এসব কথা আমার নিকট কেন লকোচ্ছ ? আমি কি পর ? প্রাণের উমা, তুমি আমি যদি পর হই, তবে জগতে আপনার লোক কে আছে ? এ স্নেহবাক্য উমা সহ্য করিতে পারিল না, নয়ন দিয়া ঝর ঝর করিয়া বারি বহিতে লাগিল, প্রাণের বিন্দ দিদির হৃদয়ে মুখখানি লুকাইয়া অভাগিনী একবার প্রাণ ভরিয়া কাঁদিল। অশ্রুসিক্ত মুখখানি ধীরে ধীরে তুলিয়া উমা ক্ষীণস্বরে বলিলেন,—বিন্দ দিদি, তোমার কাছে আমি কখনও কিছু গোপন করিনি, কখনও করব না। কিন্তু আজ ক্ষমা কর, এ সব কথা আর একদিন বলব। বিন্দর। উমা, আমি আজই শনব। মনের দুঃখ মনে রাখলে অধিক ক্লেশ হয়, আপনার লোকের কাছে বললে একটা শান্তি বোধ হয়। উমা। কি বলব বল ? বিন্দ। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলেম, ধনঞ্জয়বাব কি এখন তেমন যত্নটত্ব করেন ? উমা। বিন্দ দিদি, আমার যখন যা দরকার হয় সবই পাই, আমার রোগের চিকিৎসা করাচ্চেন, যত্ন নেই কেমন করে বলব ? বিন্দন। উমা, তুমি কি আমাকে পরষ মানুষ পেয়েছ যে, ঐ কথায় ভুলাচ্ছ ? ভাতকাপড় ও ওষুধে কি স্বামীর যত্ন ? আমি সে যত্নের কথা বলিনি। ধনঞ্জয়বাব কি পাবের মত তোমাকে স্নেহ করেন, পাবের মত কি মন খালে তোমাকে ভালবাসেন, পবের মত কি তোমার ভালবাসায় সখী হন ? উমা, মেয়েমানুষের কাছে মেয়েমানুষের কি এই কথাগুলি খালে জিজ্ঞাসা করতে হয় ? স্বামীর যে স্নেহ ধনবতী সত্রীর ধন, দরিদ্র নারীর সখে, সকল মেয়েমানুষের জীবন, সে স্নেহটী কি তোমার আছে ? হতভাগিনী উমা “না” কথাটী উচ্চারণ করিতে পারিলেন না, কেবল মাথা নাড়িয়া সেই কথার উত্তর করিয়া মাথাটী আবার বিন্দর বসুকে লুকাইলেন। বিন্দর মুখ গম্ভীর হইল, তিনি ধীরে ধীরে বলিলেন, “উমা, সে ধনটা হারালে ত চলবে না, সে ধনটা রাখবার জন্যে কি তুমি বিশেষ চেষ্টা করেছিলে ?” উমা । ভগবান জানেন, আমার ভালবাসা কমেনি, তাঁকে এখনও চক্ষে দেখলে আমার শরীর জড়ায় । বিন্দর। উমা, তোমার ভালবাসা আমি জানি, তুমি পতিব্ৰতা, এ জীবনে তোমার ভালবাসা হাস হবে ন। কিন্তু দেখ বোন, কেবল ভালবাসায় স্বামীর স্নেহ থাকে না, সংসারও চলে না। মেয়েমানুষের আরও কিছ কত্তব্য আছে, আমাদের আর কিছু শিখতে হয়। উমা। বিন্দ দিদি, যিনি আমাদের খেতে পরতে দেন, যিনি আমাদের প্রথম গর, তাঁকে ভালবাসা ছাড়া আর কি দিতে পারি ? ভালবাসা ভিন্ন নারীর আর কি দেয় আছে ? ○ trbf