পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী পারিলেন না; হতভাগিনী উমা আরও ক্ষীণ হইতে লাগিল; বর্ষাশেষে তাহার কাশি ক্রমে বদ্ধি পাইতে লাগিল; মুখখানি অতিশয় শত্ৰুক, চক্ষ দটী কোটরপ্রবিট। কাহাকেও তিরস্কার না করিয়া, আপনার মন্দ ভাগ্যের কথা না কহিয়া, সে দিনে দিনে ধীরে ধীরে আপনার গহকায্য করিত, বিন্দর সঙ্গে আলাপ করিত, মাতার সেবা-শুশ্রুষা করিত, স্বামীর জন্য নানারপ ব্যঞ্জনাদি স্বহস্তে প্রস্তুত করিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিত। হেমের যত্নে কালীতারার স্বামীর পীড়ার কিঞ্চিৎ উপশম হইল, কিন্তু আরোগ্য হইল না। সে বয়সে পরাতন রোগ শীঘ্ৰ যায় না, তাহার উপর বহৎ সংসারের নানারপে উপদ্রব, কালীঘাটের পাণ্ডাদিগের নানারপে উপদ্রব। অনেক যত্নে যেটুকু ভাল হয়, একদিন অনিয়মে সেটকু আবার মন্দ হয়, হেমচন্দ্র পীড়ার আরোগ্যের বড় আশা করিতে পারলেন না। বিন্দর মধ্যে মধ্যে শরৎকে ডাকিয়া পাঠাইতেন, শরৎ আসিয়া উঠিতে পারিত না, তাহার পড়াশনার বড় ধর্ম, এখন ভাল করিয়া না পড়িলে পরীক্ষা দিবে কিরাপে ? বিন্দরও বড় জেদ করিতেন না, কেবল প্রত্যহ কোনও নতন ব্যঞ্জন রধিয়া কি ফল ছাড়াইয়া পাঠাইয়া দিতেন। সন্ধা যত্ন সহকারে মিছরীর পানা প্রস্তুত করিত, আক পোপে ছাড়াইয়া দিত, মাগের ডাল ভিজাইয়া দিত, প্রত্যহ অপরাহুে নিজ হস্তে রেকাবি সাজাইয়া ঝিয়ের দ্বারা শরতের বাটীতে পাঠাইয়া দিত। শরৎ অনেক বারণ করিয়া পাঠাইত, কিন্তু ছেলেটী কিছু পেটক, সেই মাগের ডালগুলির নিদশন রেকাবিতে অধিকক্ষণ থাকিত না, একবার চুমাক দিতে আরম্ভ করিলে সে মিছরণীর পানা নিমেষের মধ্যে অন্তহিত হইত। ঝিকে বলিত, “ঝি, কাল থেকে আর এনো না, তাঁরা কেন রোজ রোজ কট করে প্রস্তুত করেন, আমি সত্য বলছি, আমার এ সব দরকার নেই।" ঝি খালি পারগুলি হাতে লইয়াঁ “তা দেখতেই পাচ্ছি" বলিয়া প্রস্থান করিত। বলা বাহুল্য যে, পেটকে বালকের কথায় মানা করা না শুনিয়া সন্ধা প্রত্যহ মিছরীর পানা প্রস্তুত করিয়া পাঠাইত। এইরুপে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়া গেল, শেষে পজা আসিয়া পড়িল। দেবীবাবর বাড়ীতে বড় ধুমধাম, দেবীর বৃহৎ মত্তি, অনেক গাওনা বাজনা, তিন রাত্রি যাত্রা। দেবীবাবর গহিণীর বকের বেদনাটা সেই সময় বোধ হয় একটা কমিয়াছিল, কেননা তিনি তিন রাত্রি ধরিয়া সন্ধ্যা মতলব বুঝিয়া একটা আমতা আমতা করিয়া বলিল,—হাঁ, তাতে হানি কি ? যে তেলটা দিয়েছি সেটা যেন ভাল করে মালিস করা হয় ! দেবীবাবর গহিণীর উপরোধে চন্দ্রনাথবাবর সন্ত্রী ও অন্যান্য ভদ্র-গহিণীগণ আসিয়া যাত্রা শুনিল। নিতান্ত অনভিলাষও নাই। বিদ্যাসন্দরের যাত্রা, রাধিকার মানভঞ্জন, গানগুলি বাছা বাছা, ভাবই কত, অর্থই কত । গহিণীগণ রোরুদ্যমান গন্ডা গন্ডা ছেলেগলোকে থাবড়া মারিয়া ঘমে পাড়াইয়া একাগ্রচিত্তে সেই গীতরস গ্রহণ করিতে লাগিলেন। বিদেশিনীর প্রতি রাধিকার স্তুতি শুনিয়া বাদ্ধাগণ ভাবে গদগদ চিত্তে সরে তুলিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন। বিন্দরও কি করেন, একদিন ছেলে দটীকে সাধার কাছে রাখিয়া গিয়া যাত্রা শুনিয়া আসিলেন । সকালে আসিয়া বলিলেন,—মানভঞ্জন বড় মন্দ হয়নি, তুমি একদিন গিয়ে শুনে | ENT }5{ی ༈་ཤ་ཡཱའི་་" না, মানভঞ্জন প্রথা তোমার কাছেই ছেলেবেলা অনেক শিখেছি, যাত্রায় আর কি খব ? বিন্দ স্বামীর মুখ চাপিয়া ধরিয়া বলিলেন,-মিথ্যা কথাগুলো আর বলো না, পাপ হবে। बिश्श्र श्रज्ञिट्झन् 8 बिक्कङ्गा झझणञौं আজি মহা কোলাহলে ভাসান হইয়া গিয়াছে ; মহানগরীর পথেঘাটে বাটীতে বাটীতে আনন্দধবনি ধৰনিত হইয়াছে, বাদ্য ও গীতধৰনি শদিত হইয়াছে। রাজপথে আবালবদ্ধবনিতা, কি ইতর, কি ভদ্র, কি শিশ, কি যাবা, সকলেই নদীর স্রোতের ন্যায় গমনাগমন করিয়াছে; নিতান্ত দরিদ্রও একখানি নতেন বস্ত্র পরিয়া বড় আনন্দ লাভ করিয়াছে। দেবীর উৎসবধৰনি অদ্য এই মহানগরীকে পলকিত ও কম্পিত করিয়া ক্রমে নিস্তব্ধ হইল। ←ᏬᎼ8