পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইচ্ছা করিয়াছিল, নবশিক্ষার রিদ্ধ কিরণে সে কোরকটী পাপিত হইয়াছে, জগৎসংসারে কি সগন্ধ, কি আমোদ বিতরণ করিতেছে। কোন দরিদ্রা সাধার নিকট আসিয়া বঞ্চিত হইয়া যায়, \কোন হতভাগিনী সাধার মায়া, সাধার স্নেহ, সাধার সহানুভূতি পাইয়া আপনাকে ভাগ্যবতী না মনে করে ? সশীলাকে মনের মতন করিয়া সাজাইতে সাজাইতে সন্ধার আপন জীবনের কথা ক এক একবার মনে উদয় হইল ? আপনি যে প্রণয়ধন, ষে স্বামীর ভালবাসা পাইয়াছেন, শৌলা মাতা সেই ধনে চির ভাগ্যবতী হয়, বার বার এই নীরব আশীব্বাদ করিতে করিতে দধার হৃদয় ভালবাসায় প্লাবিত হইল। মনের মতন করিয়া বালিকার সন্দর কেশপাশের উপর সথি পরাইয়া দিলেন, সুললিত বাহ ও হস্তে তাবিজ ও বাজ, দমদম ও বলয় পরাইয়া দিলেন। লাবণ্যময় কণ্ঠ ও বক্ষঃস্থলে সখের সপ্তনর ঝালাইয়া দিলেন। হাসিতে হাসিতে বড় নৈপণ্যের সহিত বালিকার চুল বাঁধয়া দিলেন, বড় স্নেহের সহিত কপালে চন্দনের টিপ পরাইয়া দলেন! বৈকাল হইতে সন্ধ্যা পয্যন্ত সজাকাৰ্য্য চলিতে লাগিল, কন্যাকে সাজান আর শেষ হয় না! স্নেহময়ী মাতা বিন্দবাসিনী এক একবার ঘরে আসিয়া তাড়া দিতেছেন, কিন্তু রসিকা সন্ধাহাসিনী আজ ছাড়িবার লোক নহেন, হাসিতে হাসিতে বলিলেন,—দিদি, খাওয়া-দাওয়ার মায়োজন তুমি গিয়া দেখ,—কন্যা সাজান আজ আমার কাজ ! হাসিতে হাসিতে বিন্দবাসিনী খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন দেখিতে গেলেন। নতন স্কিনশালা প্রস্তুত হইয়াছে, সনাতনবাটী হইতে ভাল ভাল পাচক ব্রাহ্মণ আসিয়া বড় সমারোহে ন্ধিনকায আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। ঘর ও প্রাঙ্গণ নানারপ মিস্টান্নে ভরিয়া গিয়াছে, বদ্ধমান ইতে ভাল ভাল খাজা, সীতাভোগ ও মিহিদানা আসিয়াছে, সে খাজাগলি এক একখানি থালার ন্যায় বৃহৎ, সে মিহিদানার দানাগুলি এক একটী সরিষার ন্যায় সক্ষম ! সমস্ত বাটী মেয়েতে ভরিয়া গিয়াছে, সকলে কন্যার মাতাকে সম্ভাষণ করিতেছে, সমাদর করিতেছে, তোষামোদ করিতেছে,—আজি বিন্দবাসিনীর ন্যায় কে ভাগ্যবতী ? এইরুপ আনন্দের দিনে, উৎসবের দিনে, বিন্দবাসিনীর এক একবার পরাতন কথা মনে পড়িতে লাগিল; আলোকপণ দিনে এক একটী ক্ষুদ্র মেঘের ন্যায় সখের দিনে এক একবার দুঃখের কথা হৃদয়-আকাশ দিয়া চলিয়া যায়। অল্টাদশ বৎসর পর্বে বিন্দবাসিনীর দুঃখিনী লতা দই বালিকাকে লইয়া এই গ্রামে বাস করিতেন, পুকুর হইতে জল আনিতেন, ঘর ঝাঁট দতেন, রাঁধাবাড়া করিতেন, মেয়ে দটীকে দঃখে মানুষ ! আজি যদি সেই স্নেহময়ী মাতা ফিরিয়া আসিতে পারিতেন, আজি যদি হেমচন্দ্র ও রিচন্দ্রের ন্যায় জামাতা দুইটীকে দেখিতে পাইতেন, আজি যদি বিন্দ ও সন্ধাকে একবার আয় মা, কোলে আয়” বলিয়া আলিঙ্গন করিতে পারিতেন, আজি যদি লক্ষীস্বরাপা দৌহিত্রী সুশীলাকে বকে লইয়া একবার সাশ্রজেলে আশীব্বাদ করিতে পারিতেন, আজি যদি মাতার ণ্যেবলে কন্যাদিগের সৌভাগ্যের উদয় দেখিতে পাইতেন, আজি যদি বিন্দর সংসারে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হইয়া সকলকে আশীব্বাদ করিতে পারিতেন, তাহা হইলে বিন্দর ঘর কি আনন্দপণ হইত, বিন্দর সংসার কি জ্যোতিঃপণ হইত! লোকপণ প্রাঙ্গণ হইতে সরিয়া গিয়া নীরবে বিন্দবাসিনী একবিন্দ আশ্রবষণ করিলেন, নীরবে আকাশের দিকে চাহিয়া বগীয়া মাতার জ্যোতিময়ী রাপ অনুভব করিয়া একটী প্রণাম করিলেন; এবং আশীব্বাদ প্রার্থনা করিলেন। বিবাহের দিন শোকের দিন নহে, বাদ্যকরগণ সজোরে বাদ্য করিয়া উঠিল, বাহিরবাটী হইতে কন্যাযাত্রদিগের ঘন ঘন সানন্দ হাস্যরব শদিত হইতে লাগিল। সেই কন্যাযাত্রদিগের মধ্যে হেমচন্দ্ৰ আজি শাস্তহৃদয়, প্রফুল্লমনা, সহাস্যবদন! লোকে তাঁহাকে অনেক নিন্দা করিয়াছে, বিধবা শ্যালীর বিবাহ দেওয়ায় একঘরে করিয়াছে, কিন্তু তাঁহার দেবতুল্য চরিত্র দেখিয়া সকলেই শ্রদ্ধা, ভক্তি ও মান্য করে। সচরাচর যে গণেগুলিদ্বারা লোকে “বড়লোক" হয়, হেমচন্দ্রের তাহার একটীও নাই। হেমচন্দ্রের ধন নাই, জমিদারী নাই, বিশেষ বিদ্যা নাই, জগৎসংসারে নাম নাই, রাজদত্ত উপাধি নাই, কোনও বিষয়ে অধিক গৌরব নাই। তথাপি সেই সামান্য দরিদ্র পল্লীবাসীর হৃদয়ের সাহস, নিভীকতা ও পবিত্রতা দেখিয়া শরচ্চন্দ ও রমণীকান্ত আকৃষ্ট হইয়াছেন, তাঁহার কত্তব্যসাধুনে অবিচলিত উৎসাহ ও প্রতিজ্ঞা দেখিয়া পল্লীগ্রামবাসী ও নগরবাসিগণ চমৎকৃত হইয়াছেন! দারিদ্র্যে, শোকে, রোগে মহামনা হেমচন্দ্রের মন একদিনও টুল নাই; নিন্দা ভংগনা ও অপবাদে একদিনের জন্য কৰ্ত্তব্যসাধনের পথ হইতে তাঁহার هذSر