পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
রাজসিংহ।

ছুটিল—ব্রাহ্মণও ছুটিল—অজ্ঞান, মুক্তকচ্ছ, তথাপি নারায়ণ নারায়ণ স্মরণ করিতে করিতে ব্রাহ্মণ তীরবৎ বেগে পলাইল। যাহারা তাহার পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছিল, তাহারা তাহাকে শেষে আর না দেখিতে পাইয়া প্রতিনিবৃত্ত হইল।

 তাহারা অপর কেহই নহে— মহারাণার ভৃত্যবর্গ। মহারাণার সহিত এস্থলে কি প্রকারে আমাদিগের সাক্ষাৎ হইল, তাহা এক্ষণে বুঝাইতে হইতেছে। রাজপুতগণের শিকারে বড় আনন্দ, অদ্য মহারাণা শত অশ্বারোহী এবং ভৃত্যগণ সমভিব্যাহারে মৃগয়ায় বাহির হইয়াছিলেন। এক্ষণে তাঁহারা শিকারে প্রতিনিবৃত্ত হইয়া উদয়পুরাভিমুখে যাইতেছিলেন। রাজসিংহ সর্ব্বদা প্রহরিগণ কর্ত্তৃক পরিবেষ্টিত হইয়া রাজা হইয়া থাকিতে ভালবাসিতেন না। কখন কখন অনুচরবর্গকে দূরে রাখিয়া একাকী অশ্বারোহণ করিয়া ছদ্মবেশে প্রজাদিগের অবস্থা দেখিয়া শুনিয়া বেড়াইতেন। সেইজন্য তাঁহার রাজ্যে প্রজা অত্যন্ত সুখী হইয়া উঠিয়াছিল; স্বচক্ষে সকল দেখিতেন, স্বহস্তে সকল দুঃখ নিবারণ করিতেন।

 অদ্য মৃগরা হইতে প্রত্যাবর্ত্তনকালে তিনি অনুচরবর্গকে পশ্চাতে আসিতে বলিয়া দিয়া, বিজয়নামা দ্রুতগামী অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া একাকী অগ্রসর হইয়াছিলেন। এই অবস্থায় অনন্ত মিশ্রের সহিত সাক্ষাৎ হইলে যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা কথিত হইয়াছে। রাজা দস্যুকৃত অত্যাচার শুনিয়া স্বহস্তে ব্রহ্মস্ব উদ্ধারের জন্য ছুটিয়াছিলেন। যাহা দুঃসাধ্য এবং বিপদপূর্ণ তাহাতেই তাঁহার আমোদ ছিল।

 এদিকে অনেক বেলা হইল দেখিয়া কতিপয় রাজভৃত্য