পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে নিয়ে সমস্ত কর্মবিভাগকে এক স্নায়ুজালে জড়িত করে এক বিরাট দেহ এক বৃহৎ ব্যক্তিস্বরূপ ধারণ করেছে। সবকিছু মিলে গেছে একটি অখণ্ড সাধনার মধ্যে।

 যে-সব দেশে অর্থ এবং শক্তির অধ্যবসায় ব্যক্তিগত স্বার্থদ্বারা বিভক্ত, সেখানে এ-রকম চিত্তের নিবিড় ঐক্য অসম্ভব। যখন এখানে পাঞ্চবার্ষিক য়ুরােপীয় যুদ্ধ চলছিল তখন দায়ে পড়ে দেশের অধিকাংশ ভাবনা ও কাজ এক অভিপ্রায়ে মিলিত হয়ে এক চিত্তের অধিকারে এসেছিল, এটা হয়েছিল অস্থায়ীভাবে—কিন্তু সােভিয়েট রাশিয়ায় যে-কাণ্ড চলছে তার প্রকৃতিই এই—সাধারণের কাজ, সাধারণের চিত্ত, সাধারণের স্বত্ব বলে একটা অসাধারণ সত্তা এরা সৃষ্টি করতে লেগে গেছে।

 উপনিষদের একটা কথা আমি এখানে এসে খুব স্পষ্ট করে বুঝেছি—‘মা গৃধঃ’, লােভ কোরাে না। কেন লোভ করবে না। যে-হেতু সমস্ত কিছু এক সত্যের দ্বারা পরিব্যাপ্ত—ব্যক্তিগত লোভেতেই সেই একের উপলব্ধির মধ্যে বাধা আনে। ‘তেন ত্যক্তেন ভৃঞ্জীথাঃ’—সেই একের থেকে যা আসছে তাকেই ভোগ করে। এরা আর্থিক দিক থেকে সেই কথাটা বলছে। সমস্ত মানবসাধারণের মধ্যে এরা একটি অদ্বিতীয় মানবসত্যকেই বড়ো বলে মানে—সেই একের যােগে উৎপন্ন যা-কিছু, এরা বলে তাকেই সকলে মিলে ভােগ করে—‘মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনং’,—কারো ধনে লােভ কোরো না। কিন্তু ধনের ব্যক্তিগত বিভাগ থাকলেই ধনের লােভ আপনিই হয়। সেইটিকে ঘুচিয়ে দিয়ে এরা বলতে চায় ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ’।

 য়ুরােপে অন্য সকল দেশেরই সাধনা ব্যক্তির লাভকে ব্যক্তির ভােগকে নিয়ে। তারই মন্থন-আলােড়ন খুবই প্রচণ্ড, আর পৌরাণিক

৪৭