পাতা:লালন-গীতিকা.djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৷৹
লালন-গীতিকা

যে নদীর নেই কোনো দ্বিধা
পাকা দেউলের পুরাতন ভিত ভেঙে ফেলতে।
দেখেছি একতার হাতে চলেছে গানের ধারা বেয়ে
মনের মানুষকে সন্ধান করবার
গভীর নির্জন পথে ।

রবীন্দ্রনাথ প্রদত্ত বাউলের এই পরিচয় পড়িলেই বুঝিতে পারা যায়, ইহার কিছু তিনি পাইয়াছিলেন স্রোতচঞ্চলা পদ্মার নির্জনতীরে একতার হাতে গানের ধারা বেয়ে চলা' গায়কদের কথায় সুরে, বাকিটুকু তিনি পূরণ করিয়া লইয়াছেন নিজের মধ্যে যে বাউল-কবির বাস তাহার পরিচয় মিশ্রিত করিয়া। পাবনা জেলার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কর্মকেন্দ্ৰ—আর পাশেই নদীয়া জিলার কুষ্ঠিয়া মহকুমায় বিশিষ্ট বাউল লালন শাহ, ফকিরের সাধনকেন্দ্র । লালন ফকিরের কিছু কিছু গান রবীন্দ্রনাথের কানে আসিতে লাগিল ; লালন ফকিরের খাচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়? এই জিজ্ঞাসার সহিত রবীন্দ্রনাথের জীবন-জিজ্ঞাসার গভীর মিল ছিল ; তাই স্বাভাবিকভাবেই এই গানগুলি তাহাকে আকৃষ্ট করিল। তিনি তখন লালন ফকিরের অনেক গান সংগ্ৰহ করিলেন এবং ১৩২২ সনে প্রথমে লালন ফকিরের কুড়িটি গান ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। তখন হইতেই শিক্ষিত বাঙালীর মনে বাউল সাধক ও র্তাহীদের গান—বিশেষ করিয়া লালন ফকির ও র্তাহার রচিত গান সম্বন্ধে একটা কৌতুহল জাগ্রত হয় । আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয় দীর্ঘদিন ধরিয়া তাহার নানাবিধ লেখা এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ অথচ সুমধুর ভাষণের ভিতর দিয়া এই বাউলগান সম্বন্ধে একটা ব্যাপক শ্রদ্ধা ও কৌতুহল জাগ্রত করাইতে সমর্থ হন । এইভাবেই শিক্ষিতমহলে লালন ফকিরের প্রসিদ্ধি ।

লালন শাহ ফকিরের জীবন-বৃত্তাস্ত মুখ্যতঃ কিংবদন্তী ও জনশ্রুতির অবলম্বনে গড়িয়া উঠিয়াছে। এ-ক্ষেত্রে তাহার গ্রামবাসী আত্মীয়-স্বজন এবং শিষ্য-ভক্তগণের সাক্ষ্যই প্রধান উপকরণ। লালন ফকিরের জীবন-