পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন আরো একটু আগে আসিয়া একটা বাটীর সম্মুখে দাড়াইয়া বলিলেন, তুই সিগারেট খাস, তোর পকেটে দেশলাই আছে ; একবার জেলে দেখ দেখি, এটা ক’নম্বরের বাড়ি । সতীশ আলো জালিয়া বেশ করিয়া বাড়ির নম্বর পরীক্ষা করিয়া বলিল, ভাল পড়া গেল না, কিন্তু চৌকাঠের গায়ে খড়ি দিয়ে ১৩ নম্বর লেখা আছে। বোধ হয় তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু এই কথা জিজ্ঞাসা করি আমি, বাড়ির নম্বর তেরই হোক আর তিল্পান্নই হোক, এখানে তোমার প্রয়োজনটা কি হতে পারে ? উপেন্দ্র উত্তর না দিয়া ডাকিতে লাগিলেন, হারানদী | ও হারানদী | উপরে, নীচে, কাছে, দূরে, সৰ্ব্বত্র অন্ধকার, শব্দমাত্র নাই! সতীশ তীত হইয়া উঠিল। উপেন্দ্র আবার ডাকিতে লাগিলেন । বহুক্ষণ পর উপরের জানালা ঈষৎ মুক্ত করিয়া স্ত্রী-কণ্ঠে সাড়া,আসিল, কে ? উপেন্দ্র বলিলেন, দরজা খুলে দিতে বলুন । হারানদা কোথায় ? যাচ্চি, একটু দাঁড়ান। ক্ষণপরেই দরজা খোলার শব্দের সহিত ক্ষীণ আলোর রেখা পথের উপরে আসিয়া পড়িল। উপেন্দ্র দরজা ঠেলিয়া চৌকাঠের উপর দাড়াইয়া স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। স্ত্রীলোকটি কেরোসিনের ডিবা হাতে করিয়া একপাশে দাড়াইয়া আছে। মাথার উপরে অল্প একটুখানি আঁচলের ফাক দিয়া সযত্ব রচিত কবীর এক অংশ দেখা যাইতেছে। দেখা গেল তার একটিমাত্র কেশও স্থানভ্রষ্ট হয় নাই। নিখুঁত স্বন্দর মুখের উপর হাতের আলোকসম্পাতে ভ্ৰযুগের মধ্যে সন্নিবিষ্ট কঁাচপোকার টিপ চিক্‌ চিক্‌ করিয়া উঠিল এবং ঈৰং আনত চোখ দুটি দিয়া যে বিদ্যুৎ-প্রবাহ বহিয়া গেল, চতুৰ্দ্ধিকের নিবিড় অন্ধকারে তাহার অপূৰ্ব্ব জ্যোতি ক্ষণকালের জন্য উভয়কেই বিভ্রান্ত করিয়া ফেলিল । সতীশ স্পষ্ট দেখিতে পাইল, ওষ্ঠ্যধরে হাসির রেখা বাধা পাইয়া বারংবার ফিরিয়া যাইতেছে । সে উপেন্দ্রর গা ঠেলিয়া দিল । উপেন্দ্র সচকিত ব্যস্তভাবে বলিয়া উঠিলেন, হারানদী কোথায় ? স্ত্রীলোকটি বলিল, তিনি উপরে আছেন। উঠতে হাটতে পারেন না । মা-ও আজ সাত-আটদিন শয্যাগত, বাড়ির মধ্যে শুধু আমি ভাল আছি। আপনি উপেক্সবাবু ত? আমরা আশা করেছিলুম আপনি কাল আসবেন, তাই প্রস্তুত ছিলাম না। রান্নাঘরে থাকলে এদিকের সাড়াশক শোনা যায় না, অনেক ডাকাডাকি করতে হয়। ওপরে আন্ধন, এখানে বড় ঠাণ্ডা, বলিয়াই পথ দেখাইয়া উপরে যাইবার সিড়িতে উঠিতে লাগিল। দুই-তিন ধাপ উঠিয়া মুখ ফিরাইয়া হাতের আলোটা নীচু করিয়া বলিল, সাবধানে উঠবেন, সিড়ির ইট অনেকগুলো খসে গেছে।

  • >

>>*ー〉》