পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় রাখাল বলিল, ছেলেমানুষ একটা কথা বলেচে বলেই কি সেইটেই চিরদিন মেমে চলতে হবে ? যখন আপনার অতবড় সৰ্ব্বনাশের মধ্যে দুঃখকষ্টের ধাক্কায় সে ও-কৰা বলেছিল ; কিন্তু আজ আপনার এই অবস্থা দেখে তার বুঝতে কি দেরি হবে যে, তার জীবনে অন্ত আশ্রয় গ্রহণের একাস্ত প্রয়োজন হয়েছে ! ব্ৰজবাৰু অত্যন্ত মলিন হাসিয়া কহিলেন, রাহু, রেং তোমার নতুন-মার মেয়ে। সংসারে একমাত্র আমি আর ভগবান ছাড়া আর কেউ জানেন না ওর মায়ের জেদ কেমন ছিল। তাকে নিজের সমস্ত জীবনটাই তছনছ করে বলি দিতে হয়েচে শুধু জেদেরই পারে। জেদ যদি তার চড়তো, তা ভাঙার শক্তি অন্তলোকের তো ছিলই না, তার নিজেরও ছিল না। রেণু সেই মায়ের মেয়ে । রাখাল কহিল, কিন্তু আমার মনে হয় কাকাবাবু, রেং বোধ হয় নতুন-মার মতো অত বেশি জেদী নয় । - তুমি ওদের চেনো না রাজু । মেয়ে তার মায়ের প্রকৃতি অবিকল পেয়েচে । যে-মাকে জ্ঞান হবার আগেই হারিয়েচে, তার স্বভাব প্রকৃতি অন্ত:করণ কি করে ষে ওর হ’লে৷ আমি ভেবে পাইনে। নতুন-বোঁয়ের মত তেজস্বিনী, সং-প্রকৃতির ও সৎচরিত্রের মেয়ে সংসারে অতি অল্পই হয়। এটা আমি যত ভালো করে জানি, এত আর কেউ জানে না। সেই নতুন-বে),—ব্রজবাবুর কণ্ঠ বাম্পাবরূদ্ধ হইয়া গেল। কণ্ঠ ঝাড়িয়া লইয়া বলিলেন, আমার ভাগ্য ছাড়া এ আর অন্ত কিছুই নয় রান্থ । তাকে আমি কিছুমাত্র দোষ দিইনে । ব্ৰজবাবু এই সকল আলোচনায় উত্তেজিত হইয়া উঠিতেছেন দেখিয়া রাখাল পাখা লইয়া বাতাস দিতে দিতে কহিল, ও-সব কৰা এখন থাকুক কাকাবাৰু। আপনি আগে সেরে উঠুন, তার পর হবে। ব্ৰজবাবু জীবনে কোনদিন সবিতার কথা লইয়া কাহারও সহিত আলোচনা করেন নাই। আজ র্তাহার সন্তানতুল্য রাজুর সহিত সেই বিষয় লইয়া তাহাকে আলোচনা করিতে দেখিয়া রাধাল আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল । রোগে মানুষকে এত দুৰ্ব্বল করিয়া ফেলে ষে তখন তাহার চিন্তার পর্য্যস্ত সংষম থাকে না । বোধ হয় ব্ৰজবাস্তুরও এখন আর আপন মনের গোপন গভীর চিন্তাগুলি একাকী বহন করিবার সামর্থ্য ছিল না । সারদা ঘরে আসিয়া ব্ৰজবাবুকে প্রণাম করিল। সচকিতে রাখালের দিকে চাহিয়া ব্ৰজবাবু কছিলেন, তোমার নতুন-মাও এসেছেন নাকি রাজু ? রাখাল বলিল, না । তিনি তো কলকাতায় নেই । ৰদ্ধমানে তারকের কাছে গেছেন। সারদা আপনার অসুখের খবর শুনে আসবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। বললে, কাকাবাবু আমাকে জানেন, আমার সেৰা গ্রহণ করতে তিনি আপত্তি করবেন না । z-go