পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( e কমল কহিল, মিথ্যের কথা ত হয়নি অজিতবাবু, মোহের কথাই হয়েছিল। ওঁদুটো এক বস্তু নয়। আজ মোহের বশে যদি কাউকে ভোলাতে চেয়ে থাকেন ত নিজেকুেই চেয়েচেন। আমাকে বঞ্চনা করতে চাননি তা জানি। কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত বঞ্চিত ত তুমিই হতে কমল। আমার রাত্রের মোহ দিনের আলোতে কেটে যাবে এ নিশ্চয় বুঝেও ত সঙ্গে যেতে অসম্মত হওনি ? একি শুধুই উপহাস ? কমল একটুখানি হাসূিল, যাচাই করে দেখলেন না কেন ? পথ খোলা ছিল, একবারও ত নিষেধ করিনি। অজিত নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, যদি না করে থাকে তবে এই কথাই বলব যে, তোমাকে বোঝা বাস্তবিকই কঠিন। একটা কথা তোমাকে বলি কমল। নারীর ভালবাসায় যেমন হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে, তার রূপের মোহও বুদ্ধিকে তেমনি অচেতন করে। করুক, কিন্তু একটা যত বড় সত্য, আর একটা তত বড়ই মিথ্যে। তুমি ত জানতে এ আমার ভালবাসা নয়, এ শুধু আমার ক্ষণিকের মোহ। কি করে একে তুমি প্রশ্রয় দিতে উষ্ঠত হয়েছিলে! কমল, কুহেলিকা যত বড় ঘটা করেই স্বৰ্য্যালোক ঢেকে দিক তবু সে-ই মিথ্যে। স্বৰ্য্যই ধ্রুব। অন্ধকারে ক্ষণকাল কমল নির্নিমেষে তাহার প্রতি চাহিয়া রহিল, তার পরে শাস্তকণ্ঠে কহিল, ওটা কবির উপমা অজিতবাবু, যুক্তি নয়, সত্যও নয়। কোন আদিমকালে কুহেলিকার স্বষ্টি হয়েছিল, আজও সে তেমনি বিদ্যমান আছে। স্বৰ্য্যকে সে বার বার আবৃত করেচে এবং বার বার আবৃত করবে। সুৰ্য্য ধ্রুব কি-না জানিনে, কিন্তু কুহেলিকাও মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়নি। ও দুটোই নশ্বর, হয়ত ও দুটোই নিত্যকালের । তেমনি হোক মোহ ক্ষণিকের, কিন্তু ক্ষণও ত মিথ্যে নয় । ক্ষণকালের সত্য নিয়েই সে বার বার ফিরে আসে। মালতীফুলের আয়ু স্বৰ্য্যমুখীর মত দীর্ঘ নয় বলে তাকে মিথ্যে বলে কে উড়িয়ে দেবে ? আজ একটা রাত্রির মোহকে প্রশ্রয় দিতে চেয়েছিলুম এই যদি আপনার অভিযোগ হয় অজিতবাবু, আয়ুষ্কালের দীর্ঘতাই কি জীবনে এত বড় সত্য ? কথাগুলা যে অজিত বুঝিতে পারিল না তাহা বুঝিয়াই সে বলিতে লাগিল, আমার কথা আজও বোঝবার দিন আপনার আসেনি। তাই শিবনাথের প্রতি আপনাদের ক্রোধের অবধি নেই, কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করেচি। যা পেয়েচি তার বেশি কেন পাইনি, এ-নিয়ে আমার এতটুকু নালিশ নেই। অজিত বলিল, অর্থাৎ মনটাকে এমনিই নিৰ্ব্বিকার করে তুলেচ। আচ্ছ, সংসারে কারও বিরুদ্ধে কি তোমার কোন নালিশ নেই ? р ১২৩ S=')$9