পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কমলের মুখ রাঙা হইয়া উঠিল। কে যেন তাহাকে চাবুকের বাড়ি মারিয়া অপমান করিল। সে অতি শিক্ষিতা, অতি সুন্দরী ও প্রখর বুদ্ধিশালিনী। সে পুরুষের কামনার ধন, এই ছিল তাহার ধারণা ; তাহার দৃপ্ত তেজ অপরাজেয়, ইহাই ছিল অকপট বিশ্বাস। সংসারে নারী তাহাকে ঘৃণা করিয়াছে, পুরুষে আতঙ্কে আগুন জালিয়া দগ্ধ করিতে চাহিয়াছে, অবহেলার ভাণ করে নাই তাহাও নয়, কিন্তু এ সে নয়। আজ এই লোকটর কাছে যেন সে তুচ্ছতায় মাটির সঙ্গে মিশিয়া গেল । শিবনাথ তাহাকে বঞ্চনা করিয়াছে, কিন্তু এমন করিয়া দীনতার চীরবস্ত্র তাহার অঙ্গে জড়াইয়া দেয় নাই । কমলের একটা সন্দেহ প্রবল হইয়া উঠিল, জিজ্ঞাসা করিল, আমার সম্বন্ধে তুমি বোধ হয় অনেক কথাই গুনেচ ? রাজেন বলিল, ওঁরা প্রায়ই বলেন বটে। কি বলেন ? সে একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, দেখুন, এ-সব ব্যাপারে আমার স্মরণ-শক্তি বড় খারাপ, কিছুই প্রায় মনে নেই। সত্যি বলচ ? সত্যিই বলটি । কমল জেরা করিল না, বিশ্বাস করিল। বুঝিল স্ত্রীলোকের জীবনযাত্রা-সম্বন্ধে এই মানুষটির আজও কোন কৌতুহল জাগে নাই। সে যেমন শুনিয়াছে তেমনি ভুলিয়াছে। আরও একটা জিনিস বুঝিল । ‘তুমি বলিবার অধিকার দেওয়া সত্বেও কেন সে গ্রহণ করে নাই, “আপনি বলিয়। সম্বোধন করিতেছে । তাহার অকলঙ্ক পুরুষ-চিত্ততলে আজও নারী-মুৰ্ত্তির ছায় পড়ে নাই—“তুমি বলিয়া ঘনিষ্ঠ হইয়া উঠিবার লুন্ধত তাহার অপরিজ্ঞাত। কমল মনে মনে যেন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিল। খানিক পরে কহিল, শিবনাথবাবু আমাকে পরিত্যাগ করেচেন জান ? জানি । কমল কহিল, সেদিন আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে ফাকি ছিল, কিন্তু মনের মধ্যে ফাকু ছিল না। সবাই সন্দেহ করে নানা কথা কইলে, বললে, এ-বিবাহ পাকা হ’ল না। আমার কিন্তু ভয় হ’ল না, বললুম, হোক গে কঁচি, আমাদের মন যখন মেনে নিয়েটে তখন বাইরের গ্রন্থিতে ক’পাক পড়ল আমার দেখবার দরকার নেই। বরঞ্চ ভাবলুম এ ভালই হ’ল যে, স্বামী বলে যাকে নিলুম তাকে আষ্ট্রে-পৃষ্ঠে বাধিনি। তার মুক্তির আগল যদি একটু আলগাই থাকে ত থাকৃ না। মনই যদি দেউলে হয়, Ᏹ8e