পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিবাহকে সত্যকার বিবাহ জানিয়াই সে প্রতারিত হইয়াছে, স্বেচ্ছায় সমস্ত জানিয়া গণিকার মত শিবনাথকে আশ্রয় করে নাই। কিন্তু আজ তাহার বিশ্বাসের ভিত্তিটাই ধূলিসাৎ হইল। হরেন্দ্র, অক্ষয় বা অবিনাশ নহে, নর-নারী-নির্বিশেষে সকলের পরেই তাহার একটা বিস্তৃত ও গভীর উদারতা ছিল—এইজন্তেই দেশের ও দশের কল্যাণে সকল প্রকার মঙ্গল অনুষ্ঠানেই সে ছেলেবেলা হইতে নিজেকে নিযুক্ত রাখিত। এই যে তাহার ব্রহ্মচৰ্য্য আশ্রম, এই যে তাহার অকৃপণ দান, এই যে সকলের সাথে তাহার সব-কিছু ভাগ করিয়া লওয়া, এ-সকলের মূলেই ছিল ঐ একটিমাত্র কথা । তাহার এই প্রবৃত্তিই তাহাকে গোড়া হইতে কমলের প্রতি শ্রদ্ধাম্বিত করিয়াছিল। কিন্তু সে যে আজ তাহার মুখের পরে, তাহারই প্রশ্নের উত্তরে এমন ভয়ানক জবাব দিবে তাহা ভাবে নাই। ভারতের ধৰ্ম্ম, নীতি, আচার, ইহার স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য, সভ্যতার প্রতি হরেনের অচ্ছেন্ত স্নেহ ও অপরিমেয় ভক্তি ছিল। অথচ সুদীর্ঘ অধীনতা ও ব্যক্তিগত চারিত্রিক দুৰ্ব্বলতায় ইহার ব্যক্তিক্রমগুলাকেও সে অস্বীকার করিত না ; কিন্তু এমন স্পৰ্দ্ধিত অবজ্ঞায় ইহার মূলস্বত্রকেই অস্বীকার করায় তাহার বেদনার সীমা রহিল না, এবং কমলের পিতা ইউরোপীয়, মাতা কুলটা—তাহার শিরার রক্তে ব্যভিচার প্রবহমান, একথা স্মরণ করিয়া তাহার বিতৃষ্ণায় মন কালো হইয়া উঠিল। মিনিট দুই-তিন নিঃশব্দে থাকিয় ধীরে ধীরে কহিল, এখন তা হলে যাই— কমল হরেন্দ্রর মনের ভাবটা ঠিক অনুমান করিতে পারিল না, শুধু সুস্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করিল। আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু যেজন্তে এসেছিলেন তার ত কিছু করলেন না। হরেন্দ্র মুখ তুলিয়া কহিল, কি সে ? কমল বলিল, রাজেনের খবর জানতে এসেছিলেন, কিন্তু না জেনেই চলে যাচ্চেন । আচ্ছ, এখানে তার থাকা নিয়ে আপনাদের মধ্যে কি খুব বিত্র আলোচনা হয় ? সত্যি বলবেন ? হরেন্দ্র বলিল, যদিও হয় আমি কখনও যোগ দিইনে। সে পুলিশের জিন্মায় না থাকলেই আমার যথেষ্ট। তাকে আমি চিনি। . কিন্তু আমাকে ? 齡 ν. কিন্তু আপনি ত সে-সব কিছু মানেন না। অনেকট তাই বটে। অর্থাৎ মানতেই হবে এমন কোন কঠিন শপথ নেই আমার। কিন্তু বন্ধুকে শুধু জানলে হয় না হরেনবাবু, আর একজনকেও জানা দরকার। ৯৬e