পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না, কিন্তু আর আমার ভয় নেই। কেমন করে, যেন নিশ্চয় বুঝতে পেরেচি, প্রকৃতি আপনার গরজেই এদের বঁচিয়ে রাখে। নইলে দুঃখীর কুটীরে বস্তার মত যখন মৃত্যু ঢোকে তখন তার ধ্বংসলীলার সাক্ষী থাকবে কে ? আজই হরেন্দ্রবাবুর কাছে আমি এই গল্পই করছিলাম। শিবনাথবাবুর ঘর থেকে রাত্রিশেষে যখন লজ্জায় মাথা হেট করে বেরিয়ে এলুম— আপ্তবাবু এ-বৃত্তান্ত শুনিয়াছিলেন, বলিলেন, এতে তোমার লজ্জার কি আছে কমল ? গুনেচি তাকে সেবা করার জন্তই তুমি অযাচিত র্তার বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলে । কমল কহিল, লজ্জা সেজন্ত নয় আগুবাবু। যখন দেখতে পেলুম তার কোন অসুখই নেই—সমস্তই ভাণ—কোন একটা ছলনায় আপনাদের দয়া পাওয়াই ছিল র্তার উদ্দেশু, কিন্তু তাও সফল হতে পায়নি, আপনি বাড়ি থেকে বার করে দিয়েচেন— তখন কি যে আমার হলো সে আপনাকে বোঝাতে পারব না। যে সঙ্গে ছিল তাকেও এ-কথা জানাতে পারিনি—শুধু কোনমতে রাত্রির অন্ধকারে সেদিন নিঃশব্দে বেরিয়ে এলুম। পথের মধ্যে বার বার করে কেবল এই একটা কথাই মনে হতে লাগল, এই অতি ক্ষুদ্র কাঙাল লোকটাকে রাগ করে শাস্তি দিতে যাওয়ায় না আছে ধৰ্ম্ম, না আছে সম্মান । আপ্তবাবু বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিলেন, বল কি কমল, শিবনাথের অসুখটা কি শুধু ছলনা ? সত্য নয় ? কিন্তু জবাব দিবার পূৰ্ব্বেই দ্বারের কাছে পদশা শুনিয়া সবাই চাহিয়া দেখিল নীলিমা প্রবেশ করিয়াছে। তাহার হাতে দুধের বাটি। কমল হাত তুলিয়া নমস্কার করিল। সে পাত্রটা শয্যার শিয়রে তেপায়ার উপরে রাখিয়া দিয়া প্রতিনমস্কার করিল এবং অপরের কথার মাঝখানে বাধা দিয়াছে মনে করিয়া নিজে কোন কথা না কহিয়া অদূরে নীরবে উপবেশন করিল। আগুবাবু বলিলেন, কিন্তু এ যে দুৰ্ব্বলতা কমল ! এ জিনিস ত তোমার স্বভাবের সঙ্গে মেলে না। আমি বরাবর ভাবতাম, যা অন্যায়, যা মিথ্যাচার, তাকে তুমি মাপ করো না । হরেন্দ্র কহিল, ওঁর স্বভাবের খবর জানিনে, কিন্তু মুচীদের পাড়ায় মরণ দেখে ওঁর ধারণ বদলেচে, এ সংবাদ ওঁর কাছেই পেলাম। আগে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাই থাকৃ এখন কারও বিরুদ্ধেই নালিশ করতে উনি নারাজ। আপ্তবাবু বলিলেন, কিন্তু সে যে তোমার প্রতি এতখানি অত্যাচার করলে তার কি ? ১৬৬