পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী শাশুড়ী মাথা নেড়ে বললেন, না না, সময় পাই কোথা ? সংসারের কাজ করেই ত সারতে পারিনে। এই দেথ না বাছা, বাতে মরচি, তবু চা তৈরী করতে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়েছিল। তা এ-ঘরেই না হয় পাঠিয়ে দিচ্চি, বাবুটির আবার ভারি লজ্জার শরীর, আমি থাকতে হয়ত খাবেন না । তা যাচ্ছি আমি—, বলে তিনি ফিক করে একটু মুচকে হেসে চলে গেলেন । এমনি মেয়েমানুষের বিদ্বেষ ! প্রতিশোধ নেবার বেলায় শাশুড়ী-বধুর মান্ত সম্বন্ধের কোন উচু-নীচুর ব্যবধানই রাখলেন না। সেইখানেই মেঝের ওপর চোখ বুজে শুয়ে পড়লুম, সৰ্ব্বাঙ্গ বয়ে বার বয় করে ঘাম ঝরে সমস্ত মাটিটা ভিজে গেল । শুধু একটা সাম্বন ছিল, আজ তিনি আসবেন না, আজকার রাত্রিটা অন্ততঃ চুপ করে পড়ে থাকতে পাব, র্তার কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে না। কতবার ভাবলুম উঠে বসি, কাজ-কৰ্ম্ম করি–যেন কিছুই হয়নি, কিন্তু কিছুতেই পারলুম না, সমস্ত শরীর যেন থক্ থক্ করতে লাগল। . সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেল, এ-ঘরে কেউ আলো দিতে এল না। রাত্রি তখন প্রায় আটটা, সহসা তার গলা বাইরে থেকে কানে আসতেই বুকের সমস্ত রক্ত-চলাচল যেন একেবারে থেমে গেল । তিনি ঢাকরকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, বন্ধু, নরেনবাবু হঠাৎ চলে গেলেন কেন রে ? চাকরের জবাব শোনা গেল না। তখন নিজেই বললেন, খুব সম্ভব শিকার করতে বারণ করেছিলুম বলে। তা উপায় কি ! অন্দরে ঢুকতেই, শাশুড়ীঠাকরুণ ডেকে বললেন, একবার আমার ঘরে এস ত বাবা ! র্তার যে একমুহূৰ্ত্ত দেরি সইবে না, সে আমি জানতুম। তিনি যখন আমার ঘরে এলেন, আমি কিসের একটা প্রচণ্ড নিষ্ঠুর আঘাত প্রতীক্ষণ করেই যেন সৰ্ব্বাঙ্গ কাঠের মত শক্ত করে পড়ে রইলুম, কিন্তু তিনি একটা কথাও বললেন না। কাপড়চোপড় ছেড়ে সন্ধ্যা-আহ্নিক করতে বেরিয়ে গেলেন, যেন কিছুই হয়নি, শাশুড়ী র্তাকে যেন এইমাত্র একটা কথাও বলেননি। তার পরে যথাসময়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তিনি ঘরে শুতে এলেন । সারারাত্রির মধ্যে আমার সঙ্গে একটা কথাও হ’ল না । সকালবেলা সমস্ত দ্বিধাসঙ্কোচ প্রাণপণে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে যাচ্ছি, মেজজ বললেন, হেঁসেলে তোমার আর এসে কাজ নেই দিদি, আজ আমিই আছি। \ర్శి\రి